বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে নিহত আটজনের মরদেহ এখনো পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে। মৃত্যুর পর এক-দেড় মাস পার হলেও এসব মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত নয়জনের মরদেহ ছিল। এদিন একটি মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা। চেহারার অবয়ব, আঙটি ও ঘড়ি দেখে মরদেহটি চিনতে পারেন তারা। শনাক্ত হওয়া মরদেহটি মো. তারেকের (১৮)। তার বাবার নাম মো. রিয়াজ। তারেকের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার খোদেজাবাদ গ্রামে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গ থেকে বেলা ১টার দিকে তার বাবা মরদেহটি গ্রহণ করেন।
স্বজনরা জানান, তারেক গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় স্বজনদের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়।
তারেকের ফুফাতো বোন তানিয়া আক্তার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তারেক যাত্রাবাড়ী এলাকায় দর্জির দোকানে কাজ করতেন। ৫ আগস্টের আগ থেকেই তিনি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এতদিন কোথাও খুঁজে না পেয়ে মনে হলো মর্গে গিয়ে একবার খোঁজ নিই।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেখানে মর্গ আছে দুটি। একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে, আরেকটি কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে। সংঘর্ষে বা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কাউকে হাসপাতালে আনার পর মৃত্যু হলে মরদেহ রাখা হয় জরুরি বিভাগের মর্গে। মৃত অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা ব্যক্তির বিষয়ে সন্দেহ হলেও এ মর্গে রেখে নিবন্ধন করা হয়। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে। আবার অস্বাভাবিকভাবে কারো মৃত্যু হয়েছে কিংবা অন্য কোনো হাসপাতালে তা ঘোষণা হয়েছে, এমন মরদেহ সরাসরি নেয়া হয় কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন তালিকায় এর কোনো তথ্য রাখা হয় না।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে থাকা আট মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। তাকে গত ১৪ আগস্ট অজ্ঞাত লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ফেলে চলে যায়। বাকি সাতজন পুরুষ। এরপর গত ৭ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার ভেতর থেকে উদ্ধার করা দুটি মরদেহ প্রথমে নেয়া হয় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। পরে সেগুলো ঢামেকের মর্গে পাঠানো হয়। এদের বয়স ৩০ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে।
৭ আগস্ট রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আনা হয় পুড়ে যাওয়া আরেকটি মরদেহ। বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। একই দিন গুলিস্তান থেকে কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আহত একজনকে ঢামেকে নিয়ে আসেন। যার পরনে ছিল নীল রঙের জিন্স ও টি-শার্ট। উঁচু স্থান থেকে পড়ে মারা গেছেন বলে ধারণা চিকিৎসকদের। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। নিহত এ ব্যক্তির নাম শুধু এনামুল উল্লেখ থাকলেও অন্য কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সহকারী রামু চন্দ দাশ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এসব মরদেহের ব্যাপারে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেবে। তারা যতদিন এখানে রাখতে চায়, ততদিন থাকবে। কিংবা বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দিয়ে দেয়া হতে পারে। সে সিদ্ধান্তও পুলিশ নেবে।’