বর্ষা মৌসুম ছাড়াও প্রায় সারা বছরই কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারে ভাঙন চলে আসছে। এতে বাস্তুহারা হচ্ছে শত শত পরিবার। নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান। তবে তিস্তা বাদ রেখে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারে স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ করছে সংস্থাটি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা থাকায় সেখানে কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২ হাজার ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এসব নদ-নদীর ভাঙনকবলিত ৫৭ কিলোমিটার এলাকায় কাজ করা হবে। যদিও তিনটি নদ-নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। তবে প্রকল্প এলাকায় ভাঙন কিছুটা কমলেও বাইরের এলাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙছে স্থাপনা ও ফসলি জমি। পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের বাইরে থাকা এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন তারা।
সরজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় দীঘলকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্প। কয়েকদিনে ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রকল্পের ব্যারাকের পাকা ভবন। এরই মধ্যে নদে বিলীন হয়েছে ২০টি ব্যারাকের মধ্যে দুটির অর্ধেক ভবন। তিন বছর আগে নির্মাণের পর আবাসনের ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া না হলেও এসব ব্যারাকে বসবাস করছেন ভাঙনে বাস্তুহারা ১০০টি পরিবার।
দীঘলকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতোই নদে বিলীন হচ্ছে উলিুপর উপজেলার বেগমগঞ্জ উউনিয়নের সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের পাকা ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা, গাছপালা ও ফসলি জমি। বর্ষা মৌসুমের পাশাপাশি সারা বছরই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের দুই পারে। ২০২২ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দীঘলকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১০০ ভূমিহীন পরিবারের জন্য ২০টি ব্যারাকে ১০০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমিনা জানান, পাশের চরে তার বাড়ি ছিল। গত বছর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তা বিলীন হয়ে যায়। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না তার। এজন্য বরাদ্দ না দিলেও এক প্রতিবন্ধী সন্তানসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে উঠেছেন। তার মতো প্রায় ১০০টি পরিবার এখানে বসবাস করছেন। গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে দুটি ব্যারাকের অর্ধেক ভেঙে গেছে। ভাঙন রোধ করা না গেলে সবই চলে যাবে নদে। তাদের আর যাওয়ার মতো জায়গা থাকবে না।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়নের পুরোটাই ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে অবস্থিত। অন্যান্য এলাকায় স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ করা হলেও এখানে কোনো কাজ করা হয়নি। ইউনিয়নের বেশকিছু পয়েন্টে অব্যাহতভাবে নদের ভাঙন চললেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে গত বছর তার ছিঁড়ে যায়। এবারো সাবমেরিন কেবল ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।’
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্থায়ী ভাঙন রোধে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারে চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান। তবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা থাকায় সেখানে কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। প্রকল্পের বাইরে থাকা এলাকাগুলোয় অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে।’
রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের তীরেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের কয়েকশ মানুষ এতে অংশ নেয়। বক্তারা বলেন, ‘এ বছর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে শৌলমারী ইউনিয়নের সুখেরবাতি, উত্তর বাউরিয়া ও ঘুঘুমারিসহ বিভিন্ন এলাকায় তিন শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সুখেরবাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো শত শত পরিবারের ঘরবাড়ি নদে বিলীন হয়ে যাবে। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।