গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র জনবল সংকটে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

শ্রমজীবী মানুষের চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনের জন্য ১৯৫৮ সালে গাইবান্ধায় প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র।

শ্রমজীবী মানুষের চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনের জন্য ১৯৫৮ সালে গাইবান্ধায় প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র। ২০২১ সালে নতুন করে নির্মাণ করা হয় তিনতলার আধুনিক ভবন। প্রতি বছর চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ পদে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ।

যদিও শ্রমজীবীরা বলছেন, শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও শ্রমিকরাই এসব সেবার খবর রাখেন না। প্রচারণার অভাবে অনেক শ্রমিকই জানেন না শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি। এ কারণে শ্রমিকদের কোনো কল্যাণে আসছে না কেন্দ্রটি। সরকারি শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের সেবা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে শ্রমিক অধিকার এবং সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রটিকে সচল রাখার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটিতে মেডিকেল অফিসার, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, শ্রম কল্যাণ সংগঠক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, ডিসপেনসারি, ফার্মাসিস্ট, অ্যাটেনডেন্ট, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ ১২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি পদে জনবল রয়েছে। কেন্দ্রের প্রধান দুটি পদই হলো মেডিকেল অফিসার এবং জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা। ২০২২ সাল থেকে এ পদ দুটি শূন্য রয়েছে। এছাড়া শ্রমকল্যাণ সংগঠক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, ডিসপেনসারি অ্যাটেনডেন্টসহ আরো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এ কারণে বন্ধ রয়েছে কল্যাণ কেন্দ্রটির চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ।

সেবাবঞ্চিত কয়েকজন শ্রমিক জানান, গাইবান্ধায় প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস করে। নিবন্ধিত শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে ১২৯টি। এছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে একটি করে শ্রমিক সংগঠন। জেলায় শ্রমিক ইউনিয়ন আর শ্রমিক সংগঠনের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। তবে এগুলোর বেশির ভাগই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি শ্রমজীবীদের। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটিকে সক্রিয় করে এর সেবা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দিতে কোনো শ্রমিক সংগঠন এগিয়ে আসেনি। শ্রমিক সংগঠনগুলো শুধু মে দিবসেই রেওয়াজ মেনে শোভাযাত্রা আর সভা-সমাবেশ করে আসছে।

অটোভ‍্যান চালক আব্দুর রশীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমি ভ‍্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। গাইবান্ধা শহরে আমাদের জন্য চিকিৎসা সেবা, খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের ব‍্যবস্থা রয়েছে, সেটা আমার জানা ছিল না। এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের মতো গরিব মানুষের উপকার হতো।’

সরজমিন শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে দেখা গেছে, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তিনতলা ভবনটির নিচতলা। যার এক পাশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। অন্য পাশে পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্র। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে প্রশিক্ষণ কক্ষ, বিনোদন কক্ষ, লাইব্রেরি, দর্শনার্থী কক্ষ ও বিশ্রামাগার। তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুম আর অফিস কক্ষ। ভবনজুড়ে নেই শ্রমিক অথবা তাদের পরিবারের আনাগোনা। কেন্দ্রে যেসব সেবা কার্যক্রম চালু থাকার কথা, জনবল সংকটের কারণে সেগুলো চালু না থাকায় শ্রমিকরা আসছেন না।

গাইবান্ধা উদ্যোক্তা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বাবু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গাইবান্ধায় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে—এটা শ্রমিক তো দূরের কথা, জেলার মানুষই জানে না। শুনেছি কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও জনবল নেই। তাহলে কীভাবে সেবা পাবেন শ্রমজীবীরা। দ্রুত শূন্যপদগুলো পূরণসহ সব কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন।’

গাইবান্ধা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রেজাউন্নবী রাজু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গাইবান্ধা শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটিতে মাঝেমধ্যে কিছু শ্রমিককে নিয়ে সেমিনার করা হয়। তবে তা লোকদেখানোর জন্য। অথচ প্রতি বছর কেন্দ্রের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটাতে সরকারের ব্যয় হয় কয়েক কোটি টাকা। বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।’

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের সংগঠক মো. নাছির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার না থাকায় শ্রমিকরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে শ্রম অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠিয়েছি। চিকিৎসাসেবা ছাড়া এখানে প্রশিক্ষণ ও বিনোদনমূলক সব কার্যক্রম চলমান।’

আরও