প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জনপদ চট্টগ্রামের মিরসরাই। এ উপজেলায় মহামায়া লেক, খইয়াছড়া, নাপিত্তছড়া ও বাওয়াছড়া ঝরনা ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫০-এর বেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পর্যটকনির্ভর এসব প্রতিষ্ঠানে বেচাবিক্রিও ছিল জমজমাট। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলন ও সহিংসতার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে। অনেকটাই ফাঁকা বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ফলে পর্যটকনির্ভর দোকান মালিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও সংসার খরচ চালাতে হিমশিম থেকে হচ্ছে দোকানিকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খইয়াছড়া ঝরনা ঘিরে গড়ে উঠেছে ৩০টির বেশি দোকান। দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, পর্যটকদের বিশ্রামাগার, ঝরনায় যাওয়ার জন্য পোশাকের দোকান, নিরাপদে পাহাড়ে ওঠার জন্য বাঁশের লাঠির দোকান, আচারের দোকান ও কুলিং কর্নার।
ঝর্ণা হোটেল ও রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাসান রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে পাশে থাকা কুলিং কর্নারে বসে নিরলস সময় পার করছেন। তিনি জানান, তাদের মূল ব্যবসা পর্যটকদের কাছে ভাত বিক্রি ও বিশ্রামাগার ভাড়া দেয়া। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঝরনা এলাকায় তেমন কোনো পর্যটক নেই। জুলাইয়ের প্রথম শুক্রবার প্রায় ৮০০ পর্যটকের ভাতের অর্ডার পেয়ে ছিলেন। এছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ পর্যটকের কাছে ভাত বিক্রি করতেন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ১৫-২০ জনের বেশি অর্ডার হয়নি।
শাওন হোটেল ও রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী শাওন জানান, পর্যটক না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ রয়েছে। এখন দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন দিয়ে ঋণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। পর্যটকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রির দোকান সবুজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. সবুজ জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন তার দোকানে ৪-৫ হাজার টাকার পণ্য বেচাকেনা হতো। কিন্তু কোটা আন্দোলন নিয়ে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর থেকে গত ১৫-২০ দিন বেচাকেনা নেই বললে চলে। প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা বেচাকেনা হয়। এতে খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঝর্ণার স্থানীয় গাইড তারেকুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করে তিনি প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা আয় করতেন। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোনো আয় নেই। তাই ঋণ করে সংসার খরচ চালাচ্ছেন। একই মত নাপিত্তাছড়া ঝরনা এলাকার গাইড সুমন ত্রিপুরার।
খইয়াছরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু জানান, তার ইউনিয়নে দুটি বড় ঝরনা রয়েছে। ঝরনা দুটিতে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের ভিড় হতো। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন জানান, সাম্প্রতিক দেশের পরিস্থিতির কারণে উপজেলার পর্যটনগুলোয় পর্যটক আসা কমেছে। পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীদের কোনো সংগঠন না থাকায় ব্যবসায়িকভাবে আর্থিক ক্ষতির হিসাব সম্ভব নয়। তবে পর্যটক না থাকায় ক্ষুদ্র এ ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে তিনি মনে করছেন।