চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড়ি বনে আবাস সংকোচন ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে পাহাড় থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। গত এক বছরে ১৬৫টি সাপ লোকালয় থেকে উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেছেন বন বিভাগ ও রেসকিউ টিমের সদস্যরা। বেশির ভাগই আটকা পড়েছে পাহাড়ি অঞ্চলের আশপাশে ফসলি জমির সুরক্ষাজালে।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর শুধু উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে আটকা পড়েছে তিনটি অজগর। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী এলাকায় জালে আটকা পড়া অবস্থায় ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি অজগর উদ্ধার করেন ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের সদস্যরা। অজগরটি মহামায়া বনে অবমুক্ত করা হয়। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া এলাকা থেকে ১৩ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি অজগর উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেন করেরহাট রেঞ্জের কর্মকর্তারা।
প্রাণীবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী বিচরণ করা অঞ্চলগুলোয় খাদ্যের পাশাপাশি পানি সংকটও দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি ও ঝরনা বছরের বেশির ভাগ সময় শুকিয়ে থাকছে। খাদ্যের খোঁজে প্রাণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে প্রাণও হারাচ্ছে।
বন্যপ্রাণী ও সাপ উদ্ধারকারী সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের (ডব্লিউএসআরটিবিডি) তথ্যমতে, গত এক বছরে মিরসরাইয়ে জীবিত উদ্ধার করা সাপের সংখ্যা ১৫০-এর অধিক। যার মধ্যে অজগর ১৫টি। এছাড়া বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে পদ্ম গোখরা, বড় কৃষ্ণ কালাচ, শঙ্খিনী ও সবুজ বোড়া। আর বিষ নেই এমন সাপের মধ্যে অজগর, দাঁড়াশ, দুধরাজ, ঘরগিন্নি, লাউডগা, হেলে, বেত আঁচড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে।
মিরসরাই বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহানশাহ নওশাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লোকালয়ে অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ খাদ্যের অভাবে এসে আটকা পড়ছে। তবে আটকা পড়া সাপ পাহাড়ি বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, ‘উদ্ধারকৃত অজগর ও অন্য সাপগুলোর দেহে কোনো ধরনের ক্ষত বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। সাধারণত কোনো প্রাণী আঘাতপ্রাপ্ত হলে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।’