বিশুদ্ধ পানি সংকটে ৪১ শতাংশ মানুষ

বান্দরবানে পানিবাহিত রোগে প্রতি মাসে আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাড়াগুলোয় বিশুদ্ধ পানির সংকট দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন সদরসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় লাগসই পানি প্রযুক্তি স্থাপনের ফলে সেই সংকট অনেকাংশে কমেছে।

বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাড়াগুলোয় বিশুদ্ধ পানির সংকট দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগে জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন সদরসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় লাগসই পানি প্রযুক্তি স্থাপনের ফলে সেই সংকট অনেকাংশে কমেছে। তবে পানি প্রযুক্তি স্থাপনের আওতার বাইরে থাকা প্রত্যন্ত এলাকা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে থাকা এলাকার জনবসতিগুলোয় কাটছে না বিশুদ্ধ পানির সংকট। এসব পাড়াগুলোয় যেমন চলছে বিশুদ্ধ পানির জন্য নীরব হাহাকার, তেমনি প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ বাধ্য হয়ে কুয়া, ঝিরি-ঝরনার পানি পান ব্যবহার করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নারী-শিশুসহ জেলায় হাজার ২০৪ জন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০৩ জন সর্বোচ্চ ৫৮৫ জন পানিবাহিত রোগ আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

গত বছরের মার্চে লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের একটি ম্রো পাড়ায় শিশুসহ ৫০ জন নারী-পুরুষ হাম রোগে আক্রান্ত হয়। সে সময় রোগে চার মাসের এক শিশু মারা যায় বলে সূত্রটি জানায়।

রুমার কেওক্রাডং, থানচির তাজিংডং, রোয়ংছড়ির সিপ্পি, আলীকদমের মিরিঞ্জা, থানচি আলীকদম উপজেলা সীমান্ত ক্রাউডং জেলার চিম্বুক পাহাড়ের চূড়া, ঢাল পাদদেশে ম্রো, বম, ত্রিপুরা খুমি জনগোষ্ঠীর বাস। ঐতিহ্যগতভাবে এসব জনগোষ্ঠীর মানুষ পাহাড়ের কোলে বসবাস করে আসছে।

বিভিন্ন পাড়াবাসী জানিয়েছে, ২৫-৩০ বছর আগেও পাড়ার আশপাশের পাহাড়ের ঝিরি, ঝরনাগুলোয় সারা বছর পানি থাকত। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব ঝিরি-ঝরনা কমেছে। এসব এলাকায় অবাধে পাহাড় নিধন পাথর উত্তোলনের ফলে এসব জলাধার পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

জেলার লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের দুর্গম ডিম পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত থংপং পাড়া। পাড়ার অনতিদূরে রয়েছে থানচি-আলীকদম সড়ক। পাড়ায় রয়েছে ৩২ পরিবার। এছাড়া একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত ম্রো মাতৃভাষা পাঠদানসহ প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রম চলছে এখানে। এজন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি বিদ্যালয় ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসে বিভিন্ন ম্রো পাড়ার ৯৫ জন ম্রো শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে।

গত এক দশকে পাড়ায় কোনো পানি প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়নি। তাই পাড়াবাসী ছাত্রছাত্রীদের পান ব্যবহারের জন্য পানির উৎস হিসেবে একমাত্র ভরসা পাড়া হতে আনুমানিক ২৫০ ফুট নিচে থাকা একটি পাত কুয়া।

পাড়ার বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন জন বাহাদুর ত্রিপুরা। তিনি বলেন, পানির উৎস অনেক নিচুতে। পাড়ার নারী-পুরুষদের পানি আনতে অনেক কষ্ট হয় এবং অনেক সময় লাগে।

শিক্ষিকা শিলা ত্রিপুরা বলেন, বাড়ির জন্য পানি আনতে অনেক কষ্ট হয়। ঝিরিতে যেতে অনেক সময় লাগে।

বিশুদ্ধ পানির সংকট কেবল থংপংপাড়াতে নয়, জেলার লামা, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম উপজেলার পাহাড়ের দুর্গম পাড়াগুলোয় পানির তীব্র সংকটের চিত্র কমবেশি একই।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) বান্দরবানের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৪১ দশমিক ৩৫ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতার বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে দুর্গম উপজেলা রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম লামার প্রত্যন্ত এলাকার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ সরবরাহ ব্যবস্থার বাইরে। এসব এলাকার জনবসতিগুলোয় পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যা লাখ হাজার ৯৩। হিসাবে লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে।

বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা আচার্য্য বণিক বার্তাকে বলেন, থংপং ম্রো পাড়ার প্রাকৃতিক পানির উৎস পাওয়া গেছে। সেখানে লাগসই পানি প্রযুক্তি করে দেব। বান্দরবান লামা পৌরসভায় সরবরাহের ব্যবস্থা বাড়াতে একটি মেগা প্রকল্পসহ আরো দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

আরও