নড়াইলের লোহাগড়া পৌর এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর পুরনো কাঠের সেতুটি ১৪ মাস আগে ভেঙে পড়লেও সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে নদীর দুই পারের ১৭ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব গ্রামের বাসিন্দাকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলার দ্বিতীয় বৃহৎ অ্যাড়েন্দা বাজারে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে ভুক্তভোগীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া পৌরসভার পশ্চিম এলাকার একাংশ ও উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নকে সংযুক্ত করার জন্য ২০০৬ সালে কাঠের এ সেতু নির্মাণ করে লোহাগড়া পৌরসভা। নদীর উত্তরে ঢোরখালী গ্রাম আর দক্ষিণে কচুবাড়ী গ্রাম। মাঝখানে নবগঙ্গা নদীতে প্রায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয় কাঠ দিয়ে। সেতুটি নির্মাণ করার ফলে সেতুর উত্তর পাড়ের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের অ্যাড়েন্দা হাটে আসতে দূরত্ব কমে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার। আর দক্ষিণ পাড়ের পৌর এলাকা ও কাশিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষের লোহাগড়া বাজারে যেতে দূরত্ব কমে চার-পাঁচ কিলোমিটার। কাঠের ও লোহার পাত দিয়ে তৈরি এ সেতু দিয়ে পৌর এলাকার একাংশের বাসিন্দাকে স্বল্প দূরত্বে পৌর কার্যালয়ে, উপজেলা সদর ও জেলা শহরে যাতায়াত সহজ হয়।
দীর্ঘদিন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় তিন-চার বছর আগে সেতুটি নড়বড়ে হয়ে যায়। তবু ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে, ভ্যানে, বাইসাকেল ও মোটরসসাইকেলে চলাচল করত এলাকার মানুষ। গত বছরের জুনে ড্রেজারের ধাক্কায় সেতুটির মাঝামাঝি ভেঙে পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ ১৪ মাস এ সেতু ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী। এমনকি সেতুর ভাঙা অংশ পানির নিচে তলিয়ে তা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানায়, সেতু ভেঙে পড়ার পর জনপ্রতিনিধিদের খামখেয়ালিপনায় এক বছরেরও বেশি সময় এলাকার মানুষ অনেক কষ্ট করে বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করছে। লোহাগড়া পৌর এলাকার ভুক্তভোগী রূপক মুখার্জি বলেন, ‘এ সেতু ব্যবহার করে নদীর উত্তর পাড়ের অন্তত ১৭ গ্রামের মানুষ বিশেষ করে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য অ্যাড়েন্দা হাটে ও বাজারে সরাসরি বিক্রি করতেন। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষক।’
কৃষক রমিজ মোল্যা বলেন, ‘সেতু ভেঙে পড়ায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরে অ্যাড়েন্দা হাটে ও বাজারে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের বেশি অপচয় হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা কাজী এমরান বলেন, ‘এ পথ দিয়ে এলাকার কয়েকশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত চলাচল করে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ চরমে।’
ভ্যানচালক বাবুল বলেন, ‘সেতু ভেঙে যাওয়ার পর যে পথ দিয়ে ঘুরে যেতে হয় সেই সড়কটিও ভাঙাচোরা। আগে যেখানে চোরখালী থেকে অ্যাড়েন্দা যেতে ২০ মিনিট সময় লাগত এখন ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।’
শিক্ষক হিরাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘এ সেতু দিয়ে শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ চলাচল করত। সেতু ভেঙে পড়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার।’ দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সেতু এলাকার হাবীব শেখ বলেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় পানির নিচে দামি লোহার পাত ও কাঠ নষ্ট হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।’ কচুবাডিয়া গ্রামের শ্যামসুন্দর পাল বলেন, ‘ব্রিজটা ভেঙে যাওয়ায় আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি সময়ও নষ্ট হচ্ছে।’
লোহাগড়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ দাস ভুন্ডুল বলেন, ‘নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সেতুটি প্রায় এক বছর দুই মাস আগে ড্রেজারের ধাক্কায় ভেঙে গেছে, জনগণের পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। সেতুটি মেরামতের চেষ্টা হচ্ছে।’
লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মসিয়ুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। তবে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ড্রেজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারিনি। এ মুহূর্তে সেতু মেরামতের কথা ভাবছি না, সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কথা ভাবছি।’