দেশে শুরুর দিকের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ২০২০ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে গবেষণা খাতে ব্যয় হয় কেবল ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় বাজেটে গবেষণা খাতের হিস্যা ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ।
অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্রও প্রায় অভিন্ন। আবার গোটা বছরে ১ টাকাও গবেষণায় ব্যয় করেনি এমন বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা খাতে ব্যয়ের ন্যূনতম হার নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। কমিশনের সম্প্রতি গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে বার্ষিক ব্যয়ের কমপক্ষে ২ শতাংশ গবেষণায় ব্যয় করা বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার একটি কার্যালয় স্মারক জারি করেছে ইউজিসি। দ্রুতই সেটি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে।
স্মারকে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৯(৬) ধারায় বলা আছে—বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটের ব্যয় খাতে কমিশনের নির্ধারিত একটি অংশ গবেষণায় ব্যয় করতে হবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে মোট বাজেটের ন্যূনতম ২ শতাংশ গবেষণা খাতে নির্ধারণ করা হলো। তবে আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় কমিশন সময়ে সময়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ খাতে যৌক্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এর অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে গবেষণা বরাদ্দ নির্ধারণ ও ব্যয়ের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আইনের সে নির্দেশনার আলোকে কমিশন একটি কার্যালয় স্মারক জারি করেছে। আমরা আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা অনুসরণ করবে। স্মারকে ন্যূনতম একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। গুণগত উচ্চশিক্ষার স্বার্থে তারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী গবেষণায় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয় ছিল ৩০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গবেষণা খাতে ব্যয় হয় ৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ওই বছর গবেষণা খাতে ব্যয়ের হার ছিল ২ শতাংশের কিছু বেশি। গবেষণা ব্যয় নিয়ে কমিশনের নতুন নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা এখনো এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি। যদি কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, সেটা গোটা বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষার জন্য খুবই ইতিবাচক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে বলতে গেলে, আমরা এমনিতেই এ নির্দেশনা পালনকারীদের মধ্যেই থাকব। আমাদের শিক্ষকরা নিয়মিত বরাদ্দকৃত ব্যয়ের বাইরেও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা থেকে শুরু করে বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বড় অংকের গবেষণা তহবিল পান।
ড. আতিকুল আরো বলেন, শুধু গবেষণায় বরাদ্দ রাখলে হবে না, তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। আবার মোটা অংকের বরাদ্দ রাখা হলো কিন্তু কোনো রিসার্চ আউটকাম নেই, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কমিশনকে এ বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর গবেষণার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, গবেষক পাওয়া যাচ্ছে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ শুধু এখানকার শিক্ষকদের জন্য সীমাবদ্ধ। আমরা উন্মুক্তভাবে বিজ্ঞাপন দিয়েও গবেষণা প্রস্তাব পাচ্ছি না। এর কারণ হচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।
ইউজিসির তথ্যমতে, বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালে গবেষণা খাতে কোনো অর্থই ব্যয় করেনি। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি।
গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে না ওঠার বিষয়টি স্পষ্ট হয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র্যাংকিংয়ের দিকে তাকালেও। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কার্যক্রম মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সিমাগো-স্কপাসের সূচক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ৩৪টি উচ্চশিক্ষালয় জায়গা পেয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ১২টি। যদিও দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৯টি।