ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টি ছানামুখী ভৌগোলিক
নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই মিষ্টির সুনাম রয়েছে সারা দেশে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া দেশের আর কোথাও এই মিষ্টি তৈরি হয় না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
এই মিষ্টান্ন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান
পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ডিপিডিটি
কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয়।
কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি,
পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি
দেয়া হয়। কোনো একটি পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
প্রশাসনকে নিশ্চিত করে। ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।
২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো.
মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, চলতি
বছরের ৮ এপ্রিল থেকে ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের
নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি নিবন্ধিত হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো.
শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল
ছানামুখী মিষ্টিকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ডিপিডিটির
রেজিস্ট্রারের কাছে ১০ পৃষ্ঠার একটি আবেদন পাঠান। সেখানে ছানামুখী মিষ্টান্নের বৈশিষ্ট্য,
ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের প্রদ্ধতিসহ নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ
করেন।
জানা গেছে, জেলা তথ্য বাতায়নে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী
খাবার হিসেবে উল্লেখ আছে এই ছানামুখীর নাম। ছানামুখীর উৎপত্তি ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশের
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এক কেজি ছানামুখী তৈরিতে গাভির সাত-আট লিটার দুধ লাগে। প্রতি কেজি
ছানামুখীর দাম ৭০০ টাকা।
শহরের ফরিদুল হুদা রোডের আদর্শ মাতৃভাণ্ডারের
স্বত্বাধিকারী দুলাল চন্দ্র পাল জানান, প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে ছানায় পরিণত
করতে হয়। এরপর পানি ঝরে পড়বে এমন টুকরিতে ছানা রাখতে হবে। ওই ছানা পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে
ঝুলিয়ে রেখে সব পানি ঝরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যাওয়া ছানা ছোট
ছোট করে প্রায় সমান আকৃতির কাটতে হবে। এরপর পানি, চিনি ও এলাচির মিশ্রণে তৈরি করা শিরায়
ছানা ছেড়ে দিয়ে নাড়তে হবে। ওই শিরা থেকে ছানা তুলে ঠাণ্ডা করা অর্থাৎ শুকানোর ব্যবস্থা
করতে হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
(সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে
ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। জেলার ব্র্যান্ডবুকেও
একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদেশী অতিথিসহ মন্ত্রী পর্যায়ের যারাই আসেন, ছানামুখী
দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
ছানামুখী নিয়ে প্রচলিত ইতিহাস হলো— মহাদেব পাঁড়ে নামে
ভারতের কাশিধামের এক কারিগরের হাত ধরে এর জন্ম। মহাদেব পাঁড়ে তার বড় ভাই দুর্গা প্রসাদের
সঙ্গে কলকাতায় এসে মিষ্টির দোকানে কাজ শুরু করেন। দুর্গা প্রসাদের মৃত্যুর পর মহাদেব
পাঁড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন। ঘুরতে ঘুরতে চলে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তখন তিনি পৌর
এলাকার মেড্ডার শিবরাম মোদকের দোকানে কাজ শুরু করেন। শিবরামের দোকানে বানানো মহাদেব
পাঁড়ের সেই ছানামুখী কয়েক দিনের মধ্যেই আলোচনায় চলে আসে। পরে অন্যান্য দোকানদাররাও
ছানামুখী বানানো শুরু করেন।