রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু রেজা বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠবে বায়োটেকনোলজি সেক্টর। এছাড়াও অদূর ভবিষ্যতে গার্মেন্টস সেক্টরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এ সেক্টর।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের ৪২০ নম্বর কক্ষে বায়োটেকনোলজি ও বাংলাদেশের আগামীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে ‘বদলে দেবো বাংলাদেশ শীর্ষক’ মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, গত ত্রিশ বছর যাবৎ আমাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অপেশাদার লোক বসানোর ফলে এ সেক্টর থেকে দেশ ও জাতির প্রাপ্তি প্রায় শূন্য। এই প্রথম বায়োটেক পেশাজীবী হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজির প্রফেসর ড. শাহেদুর রহমানকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়ায় আমরা সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের যে নতুন বাংলাদেশ এসেছে সেখানে বর্তমান সরকার এ রকম একটি চমৎকার, যুগোপযোগী ও আশাজাগানিয়া পদক্ষেপ নিয়েছেন যা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে এবং নতুন শিল্প ক্ষেত্র তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এনআইবি প্রতিষ্ঠার পর এ প্রথম কোনো বিশেষ গ্র্যাজুয়েট এবং বিশেষজ্ঞ মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন পেলেন। এ ইনস্টিটিউটটি হচ্ছে বায়োটেকনোলজির জন্য। দেশের উন্নয়নে বায়োটেককে কাজে লাগানো, বায়োটেক থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষেত্র তৈরি, এ সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে এই ইনস্টিটিউটের জন্ম। কিন্তু এর আগে কখনোই কোনো বায়োটেকনোলজিস্টকে এর দায়িত্বভার দেয়া হয়নি। ফলে এ সেক্টরটি বরাবরই থেকেছে অবহেলিত, এর থেকে পাস করা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী হয়েছে বৈষম্যের শিকার। কেবলমাত্র একজন বায়োটেকনোলজিস্টই পারেন এই সেক্টরের সমস্যাগুলোর সমাধান ও এর উন্নয়ন করতে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বায়োটেকনোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয় এ বিভাগ। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশটিরও বেশি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত বিষয় হিসাবে ৪ বছরের অনার্স কোর্স পড়ানো হয়। কিন্তু প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি পড়ানো হলেও দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি, গড়ে ওঠেনি উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্প, তৈরি হয়নি বায়েটেক শিল্পবান্ধব কোনো নীতিমালা, নেয়া হয়নি বিদেশী উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করার কোনো কর্মপরিকল্পনা। কিন্তু বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদার কারণে দেশের এ মেধাবীরা বিদেশের পথে পাড়ি জমায়।
তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বায়োটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে চাকরিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দীর্ঘকাল থেকে। তাদের অভিভাবক হিসেবে এনআইবি কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। অথচ এনআইবির মাধ্যমে বায়োটেক শিক্ষা, গবেষণা, শিল্প বিকশিত হবে; বায়োটেক শিক্ষায় বিশেষায়িত হয়ে পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের ও পেশাজীবীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
এনআইবির মহাপরিচালক বায়োটেকনোলজি থেকেই প্রতিবছর নিয়োগ দেয়ার দাবি করে এ শিক্ষক বলেন, বায়োটেকনোলজি পেশাজীবী থেকে আসলেই বায়োটেকনোলজির শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে, সেই সঙ্গে বায়োটেকনোলজি সংশ্লিষ্ট শিল্প বিকশিত হবে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে বায়োটেক সেক্টর ড. শাহেদের যোগ্য পরিকল্পনা এবং পরিচালনায় মূখ্য ভূমিকা রাখবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।