দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা কার্যক্রম ডুয়াল সেমিস্টারে রূপান্তরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে নির্দেশনা দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। দফায় দফায় নির্দেশ দেয়ার পরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় তিন সেমিস্টার পদ্ধতিতে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই ডুয়াল সেমিস্টারে যেতে এবার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ইউজিসি। কমিশনের সম্প্রতি গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ডুয়াল সেমিস্টারে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এ বিষয়ক একটি চিঠি কমিশন থেকে গত ২৮ নভেম্বর বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজিস্ট্রারদের পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কিছুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সুনামের সঙ্গে বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ২৪(৩) এবং ৩৫(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রোগ্রাম ও কোর্স অনুমোদনের অন্যতম শর্ত হলো ‘প্রোগ্রামটি অবশ্যই ডুয়াল সেমিস্টার ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে।’ বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চাহিদা অনুযায়ী কমিশন প্রণীত আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) টেমপ্লেট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব প্রোগ্রাম বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তদুপরি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৭-এর ১৫ ধারার আওতায় প্রণীত বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্কেও (বিএনকিউএফ) অনুরূপ বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। বর্ণিতাবস্থায় দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি (বাই-সেমিস্টার) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিশন প্রণীত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
চিঠিটি ইস্যু করা হয়েছে কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখের স্বাক্ষরে। জানতে চাইলে কমিশনের এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম, পাঠ পরিকল্পনা, কোর্স—এর সবই কমিশন অনুমোদিত হতে হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে ডুয়াল কিংবা বাই-সেমিস্টারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। আউটকাম বেজড কারিকুলাম অনুযায়ীও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাই-সেমিস্টারে চলবে। সর্বোপরি এ পদ্ধতির অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের কার্যক্রম বাই-সেমিস্টারে পরিচালনা করছে। তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ইউজিসির ডুয়াল সেমিস্টার বিষয়ক এ নির্দেশনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। দুই সেমিস্টারে কার্যক্রম চালালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—উভয়ের জন্যই ভালো। শিক্ষকরা পাঠদান ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সময় পান। তিন সেমিস্টার চললে তাড়াহুড়ো করে কোর্স শেষ করতে হয়। আমরা আরো আগে থেকে ডুয়াল সেমিস্টারে রূপান্তরের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবে দীর্ঘদিন চলে আসা পদ্ধতি এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে পরিবর্তন করা কঠিন। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে আমাদের সবগুলো প্রোগ্রাম ডুয়াল সেমিস্টার পদ্ধতিতে নিয়ে আসা হবে।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৯টি। এর আগে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আউটকাম বেইজড এডুকেশন পদ্ধতির কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দেয় কমিশন। সে নির্দেশনার আলোকে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবিত কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ওবিই কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে বাই-সেমিস্টারের ভিত্তিতে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে কমিশন বদ্ধপরিকর। এজন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আলোকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। তেমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওবিই কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাই-সেমিস্টারে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিশন নির্দেশনা দেয়। ওবিই ও বিএনকিউএফ অনুযায়ী সব বিশ্ববিদ্যালয়েই বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসৃত হবে। এর বাইরে গেলে প্রোগ্রামগুলো অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া যাবে না। কমিশন নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ওবিই কারিকুলাম বিষয়ে প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করে আসছে। এছাড়া বিভিন্ন নিজস্ব উদ্যোগেও এ-বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করছে। ওবিই কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি টেমপ্লেটও তৈরি করে দেয় কমিশন। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিশ্চিতে কমিশন বিধি অনুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।