চেন্নাই টেস্টে গতকাল দ্রুতগতিতে সেঞ্চুরি তুলে নেন শুবমন গিল ও ঋষভ পন্ত। তাদের ১৬৭ রানের জুটিতে ভর করে ৪ উইকেটে ২৮৭ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এতে বাংলাদেশ পড়ে ৫১৫ রানের বিশাল টার্গেটের সামনে। বিশাল এ রান তাড়া করে জিততে হলে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে গড়তে হবে ইতিহাস। ভারতীয় বোলার ও ফিল্ডারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের মুখে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। দিন শেষে স্কোর ১৫৮/৪। টাইগারদের ৬ উইকেট হাতে নিয়ে এখনো প্রয়োজন ৩৫৭ রান।
দারুণ সূচনা করেও নিজেদের কিংবা দলের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। ৬২ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। জাকির ৪৭ বলে ৩৩ রান করে গতি বোলার জশপ্রীত বুমরাহর শিকার হন। এরপর ৩৫ রান করা সাদমানের উইকেট নিয়েছেন তারকা অফস্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন। ২৪ বলে ১৩ রান করে অশ্বিনের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত মুমিনুল হক হয়েছেন বোল্ড।
রাওয়ালপিন্ডি জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহিম এবার চেন্নাইতে প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। গতকাল ১৩ রান করে অশ্বিনের বলে লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। এভাবে বাংলাদেশের স্কোরটা ৮৬/১ থেকে দেখতে না দেখতেই হয়ে গেল ১৪৬/৪!
দলীয় ১৪৬ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর সাকিবকে নিয়ে নতুনভাবে লড়াই শুরু করেন অধিনায়ক শান্ত। চাপের মুখেও মারমুখী খেলে ৬০ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন টাইগার দলনায়ক। তার ব্যাটে ভর করেই ১৫০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ১৪ বলে ৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন। অশ্বিন তিনটি ও বুমরাহ একটি উইকেট নেন।
আলোকস্বল্পতায় তৃতীয় দিন ৯.৪ ওভার কম খেলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশই হয়তো লাভবান হয়েছে। তৃতীয় দিন বিকালে আরো উইকেট হারানোর ঝুঁকি ছিল অতিথি দলের।
এর আগে ডানহাতি ব্যাটার শুভমন গিল ১৭৬ বলে ১০টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। এটা তার পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি। বামহাতি ব্যাটার পন্ত ১২৮ বলে ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৯ রান করেন। পন্ত করেন ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। শুক্রবার ১৪ রানের জুটি গড়া এ দুজন গতকাল প্রথম সেশনে ২৮ ওভার ব্যাটিং করে আরো ১২৪ রান তোলেন বোর্ডে। পরে আরো ২৯ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। পন্তকে শিকারে পরিণত করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর গিল ও লোকেশ রাহুল (২২*) আরো ৫৩ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদের তোপের মুখে ভারত প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। সেঞ্চুরি করেন রবিচন্দ্র অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা করেন ৮৬ রান। সপ্তম উইকেটে ১৯৯ রান যোগ করেন দুজন। এরপর শুক্রবার বাংলাদেশকে ১৪৯ রানে অলআউট করে দেয় ভারত। তবে ২২৭ রানের লিড পেয়েও বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে আবারো ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা টানা দ্বিতীয় ইনিংসে হতাশ করেন। প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ১৪৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট নেই। এখান থেকে কতদূর যেতে পারবেন শান্তরা, সে প্রশ্ন এখন সময়ের হাতেই তোলা থাক।
টেস্টে রেকর্ড চেজ ৪১৮ রানের হলেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে জিতেছে। ২০০৯ সালে সেন্ট জর্জেসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পথে ২১৭ রান করেছিল টাইগাররা। এছাড়া ২০১৭ সালে কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৯১, রাওয়ালপিন্ডিতে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮৫, মিরপুরে ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ ও ২০১৪ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৩৭৬ ও ২৮৭/৪/ডি. (গিল ১১৯*, পন্ত ১০৯; মিরাজ ২/১০৩)। বাংলাদেশ: ১৪৯ ও ১৫৮/৪ (শান্ত ৫১*, সাকিব ৫*; অশ্বিন ৩/৬৩)—তৃতীয় দিন শেষে।