বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) কাজী সালাহউদ্দিনের ১৬ বছরের দীর্ঘ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। সংস্থাটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হলেন সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল। গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভার পর ভোটের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুরের সংগঠক আ ফ ম মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ১২৩-৫ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারান তাবিথ আউয়াল।
সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার ও বিশিষ্ট ফুটবল সংগঠক তরফদার রুহুল আমিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় সিনিয়র সহসভাপতি পদে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান।
গতকাল সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন চারজন। নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ১১৫ ভোট পেয়ে প্রথম সহসভাপতি এবং ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী ১০৮ ভোট, সাব্বির আহমেদ আরেফ ৯০ ও ফাহাদ মোহাম্মদ আহমেদ করিম ৮৭ ভোট পেয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সহসভাপতি হয়েছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সম্প্রতি কাজী সালাহউদ্দিন নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়, প্রায় ১৬ বছর পর বাফুফে সভাপতির চেয়ারে বসবেন নতুন একজন। তবে তাবিথ ফেডারেশনে নতুন নন। ২০১২ ও ২০১৬ সালে সহসভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০২০ সালের নির্বাচনে সহসভাপতি পদে মহি উদ্দিন মহির সঙ্গে ৬৫-৬৫ ভোটে ড্র করেন। পুনরায় ভোট হলে ৬৭-৬৩ ব্যবধানে হেরে যান তাবিথ। চার বছর পর বসছেন সভাপতির চেয়ারে। আগামী চার বছরের জন্য বাফুফের সভাপতির দায়িত্ব পেলেন তিনি।
এছাড়া সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মো. ইকবাল হোসেন, আমীরুল ইসলাম (বাবু), ইমতিয়াজ হামিদ (সবুজ), কামরুল হাসান হিলটন, জাকির হোসেন চৌধুরী, টিপু সুলতান, বিজন বড়ুয়া, মাহফুজা আক্তার (কিরণ), মো. গোলাম গাউছ, মো. ছাইদ হাসান কানন, মো. মঞ্জুরুল করিম, মো. মাহি উদ্দিন আহমদ (সেলিম) ও সত্যজিৎ দাস রূপু, সাখাওয়াত হোসেন (শাহীন)। মো. এখলাছ উদ্দিন ও মো. সাইফুর রহমান মনি সমসংখ্যক (৬১টি) ভোট পেয়েছেন। এ দুজন থেকে একজন নির্বাচিত হবেন।
এবার নির্বাহী কমিটির ২১ পদের মধ্যে ২০টির বিপরীতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ৪৬ প্রার্থী। সভাপতি পদের দুজন ছাড়াও চার সহসভাপতি পদে ছয়জন ও ১৫টি সদস্যপদে নির্বাচন করেছেন ৩৭ জন। মোট ভোটার ১৩৩ জন। তবে ভোট দিয়েছেন ১২৮ জন। এর মধ্যে তাবিথ একাই পান ১২৩ ভোট।
বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিগত কমিটিকে, তারা যে অবদানগুলো রেখেছে। আমরা আজ থেকে এ বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করছি। ডেলিগেটরা আমাদের নির্বাচিত করেছেন। এ দলকে দেখে আমি বিশ্বাস করি কোনো কাজই চ্যালেঞ্জিং না। আমরা অবশ্যই প্রত্যেকটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব এবং জনগণের যে প্রত্যাশা সেটা আমরা পূরণ করব।’
নিজের লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একমত যে ফুটবলে আমরা সংস্কার আনতে চাই। এ কারণে আমরা শুরুতে আমাদের সংবিধান ও পরিকল্পনার জায়গায় সংস্কারের কর্মসূচিগুলো হাতে নেব। একই সঙ্গে মাঠের ফুটবল যেন চলমান থাকে এবং আরো উচ্চ পর্যায়ে চলে যায়, সে ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করব।’
নির্বাচনে ভোটার বাফুফের ১৩৩ কাউন্সিলর। এর মধ্যে জেলা ফুটবল সংস্থার ৫৮ জন, প্রিমিয়ার লিগের ১০ ক্লাবের ১০ জন, আটটি বিভাগীয় ফুটবল সংস্থা থেকে আটজন, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের পাঁচ ক্লাবের পাঁচজন, প্রথম বিভাগের ১৮ ক্লাবের ১৮ জন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের আটটি করে ক্লাবের ১৬ জন, এবারই প্রথম যুক্ত হওয়া নারী লিগের শীর্ষ চার ক্লাবের চারজন, ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন ও পাঁচ শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি কাউন্সিলর হিসেবে ভোট দিতে পারেন। এছাড়া রেফারি, কোচেস অ্যাসোসিয়েশন ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থা কাউন্সিলর ছিলেন একজন করে।