যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। এতে এ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে ৫০টি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬২৫ হেক্টর জমির ফসল। ভেসে গেছে তিন শতাধিক মাছের ঘের।
কেশবপুরের ভোগতী নরেন্দ্রপুরের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভবানীপুরের মাঠপাড়া বিলে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টির পানিতে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কীভাবে তিনি সমিতির টাকা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। গত বছর ওই জমিতে আমন আবাদ করে প্রতি কাঠায় এক মণ করে ধান পেয়েছিলেন। এবার কোনো ধান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ধান।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ইউনিয়নের বিলসংলগ্ন গ্রামগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। কয়েকশ মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ১২৫ হেক্টর জমির সবজি ও ধান তলিয়ে গেছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহায়তা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে দেখা যায়নি।’
চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এবারের জলাবদ্ধতায় অভয়নগর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলিশিয়া ইউনিয়ন। অথচ সরকারি কোনো সহায়তা মেলেনি।’
অভয়নগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, অভয়নগরে তিন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। আর্থিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন, ‘হরি নদের ২ দশমিক ১ কিলোমিটার পুনর্খননকাজ চলমান। জলাবদ্ধতা নিরসনে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সরানোর কাজ চলছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানে আরো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।’