রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় আটটি গোপন আটক কেন্দ্র খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। রাজধানীর গুলশানে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে গতকাল কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। তবে আটক কেন্দ্রগুলো কারা পরিচালনা করত তদন্তের স্বার্থে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, ‘আমরা র্যাব পরিচালিত একটি সেল পেয়েছি, যেটি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫ বাই ৪ ফুট। সেখানে আলো ঢোকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। একটি ড্রেন ছাড়া কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ছিল না। এমন পরিবেশেই বন্দিদের বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের কাজে অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ করেন কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রমাণ নষ্ট করছে। তারা সেল ও দেয়াল ভেঙে ফেলছে। যেসব বাহিনী প্রমাণ নষ্ট করছে তারা আমাদের সহযোগিতা করছে না। এখনকার কর্মকর্তারাও আগের কর্মকর্তাদের অপরাধে জড়িত ছিলেন।’
গুমসংক্রান্ত কমিশনে ১ হাজার ৬০০-এর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং ১৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করা অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি ঘটনায় র্যাব, ৩৭টিতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), ২৬টিতে ডিরেক্টরেট জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ৫৫টিতে গোয়েন্দা শাখা, ২৫টিতে পুলিশ ও ৬৮টি ঘটনায় অন্যদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।’
আইনের তোয়াক্কা না করে মানুষকে আটকে রাখা হতো বলে অভিযোগ করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ আসামিদের কীভাবে গ্রেফতার করবে, তার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটা অনুসরণ করা হয়নি। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আইনের তোয়াক্কা না করে আটকে রাখা হতো। রাজনৈতিক কারণেই বেশির ভাগ ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগের বাইরে স্বপ্রণোদিত হয়েও অনেককে গুম করা হয়।’ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৬০০-এর বেশি গুম হওয়া ব্যক্তিকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি বলেও জানান তিনি।
গুমের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতজন সদস্য সংশ্লিষ্ট—এ প্রশ্নের জবাবে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘সে সংখ্যাটা এখনো বলা যাবে না। ৭ তারিখ (নভেম্বর) থেকে বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে। আমরা সমন ইস্যু করে দিয়েছি। প্রথম দিন সাতজনকে ডাকা হয়েছে। তারপর তিনজন, সাতজন, পাঁচজন এভাবে চলতে থাকবে। এখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ডিজিএফআইয়ের সদস্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।’