বন বিভাগ রাঙ্গামাটি সার্কেলে ৬০ শতাংশ পদ শূন্য

পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি মূলত বন বিভাগের রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অধীন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি মূলত বন বিভাগের রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অধীন। দুটি জেলায় ছয়টি বিভাগ ও একটি সার্কেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে রাঙ্গামাটি বন সংরক্ষকের কার্যালয়। তবে অঞ্চলটির প্রায় ৬০ শতাংশ জনবলই বর্তমানে শূন্য রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বন কর্মকর্তারা। ৫৬টি রেঞ্জ কার্যালয়ে ৫৯টি ফরেস্ট রেঞ্জার পদ থাকলেও ৫৮টিই শূন্য। রেঞ্জ কর্মকর্তার বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন ফরেস্টাররা। তবে কর্মক্ষেত্রে বাড়তি চাপ ও পদোন্নতি জটে বনকর্মীদের মাঝেও রয়েছে অসন্তোষ।

জনবল সংকটের কারণে বন বিভাগের প্রান্তিক সেবা প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে অবশ্যই আমাদের সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। ফরেস্ট রেঞ্জার না থাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ফরেস্টাররা। বনকর্মী সংকটের  কারণে বনভূমি রক্ষা, অবৈধভাবে দখল ঠেকানো, নিয়মিত নজরদারি করা যাচ্ছে না। এছাড়া পর্যাপ্ত জনবল থাকলে তাদের নিয়ে বনের ভেতরে যেতে পারতাম। বনকর্মী সংকটের কারণে অনেক কিছুই করা যাচ্ছে না।’

বন সংরক্ষক কার্যালয়ের (সিএফ) দেয়া তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি সার্কেলের অধীনে ছয়টি বিভাগ রয়েছে। ছয়টি বিভাগের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ২৬৯টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ১২৭ জন, শূন্য রয়েছে ১৪২টি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ৩১৪টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ১১০ জন, শূন্য রয়েছে ২০৪টি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের ২২৯টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৭৯ জন, শূন্য রয়েছে ১৫০টি। অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগের ১৪৪টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৬৯ জন, শূন্য রয়েছে ৭৫টি। কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বন বিভাগের ১৮৬টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৫৪ জন, শূন্য রয়েছে ১৩২টি। খাগড়াছড়ি বন বিভাগের ১৩৩টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৭৪ জন, শূন্য রয়েছে ৫৯টি এবং রাঙ্গামাটি সার্কেল বন সংরক্ষকের কার্যালয়ে ২৬টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৯ জন, শূন্য রয়েছে ১৭টি। মোট ১ হাজার ৩০১টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে নিয়োজিত রয়েছেন ৫২২ জন, শূন্য রয়েছে ৭৭৯টি। মোট জনবলের হিসাবে বন বিভাগ রাঙ্গামাটি অঞ্চলের প্রায় ৬০ শতাংশ পদই রয়েছে শূন্য।

ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও উপবন সংরক্ষক ড. মো. জাহিদুর রহমান মিয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বন বিভাগে অনেক জনবল শূন্য রয়েছে। বর্তমানে ফরেস্ট রেঞ্জার, ফরেস্টার ও বনপ্রহরীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পিএসসির মাধ্যমে অনেকেই যোগদান করছেন। নিয়োগ ও পদোন্নতি জট খুলে যাচ্ছে। নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বিভিন্ন পদ সৃজন হবে ও পদায়ন করা হবে। এতে করে জনবল সংকট অনেকটা কমে আসবে। হুট করে তো নিরসন হবে না, ধীরে ধীরে সংকট কমবে।’

এদিকে ছয়টি বিভাগের অধীনে ৫৬টি রেঞ্জ কার্যালয়ের আওতাধীন ফরেস্ট রেঞ্জার ৫৯টি মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে। তবে ৫৮টি পদই শূন্য। কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে একজন ফরেস্ট রেঞ্জার নিয়োজিত। অন্য রেঞ্জগুলোয় ফরেস্ট রেঞ্জারের দায়িত্ব পালন করছেন ফরেস্টাররা। ১৬২টি ফরেস্টার পদের বিপরীতে নিয়োজিত রয়েছেন ৮৫ জন। শূন্য পদ রয়েছে ৭৭টি। ৮৫ জনের মধ্যে ৫৮ জন পালন করছেন অতিরিক্ত দায়িত্ব।

অন্যদিকে ডেপুটি রেঞ্জারের ৯৫টি পদ থাকলেও কেউ নিয়োজিত নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর বন বিভাগে একজন করে উপবিভাগীয় বন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও এ দুটি পদও শূন্য। ছয়টি বিভাগে ১১টি সহকারী বন সংরক্ষকের পদ থাকলেও নিয়োজিত আছেন ছয়জন। সংরক্ষিত বন সুরক্ষায় দায়িত্বে ৪৫১ জন বনপ্রহরীর বিপরীতে নিয়োজিত রয়েছেন ১৮৮ জন, শূন্য রয়েছে ২৬৩টি পদ। এছাড়া অন্যান্য পদেও বেশির ভাগই জনবল অর্ধেক শূন্য রয়েছে।

জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বন বিভাগ রাঙ্গামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ জন বনপ্রহরী নিয়োগ দেয়া দায়ন হলে তাদের (বনপ্রহরী) অনেকেই রাঙ্গামাটি অঞ্চলে যোগদান করবেন। এছাড়া নতুন করে ফরেস্ট রেঞ্জার, ফরেস্টার নিয়োগ ও পদায়ন করা হচ্ছে; এতে করে জনবল সংকট অনেকটা কমিয়ে আসবে। রেঞ্জ কার্যালয়গুলো ফরেস্ট রেঞ্জারের পদে নিয়োগ না থাকলেও ফরেস্টাররা ফরেস্ট রেঞ্জারের দায়িত্ব পালন করছেন।’

জনবল সংকটের কারণে সেবাপ্রদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্লান্টেশন (বৃক্ষ সৃজন) কার্যক্রম তেমন নেই। এখানে বন সুরক্ষার কার্যক্রম চলমান।’

তবে মাঠ পর্যায়ের বনকর্মীরা জানান, জনবল সংকটের প্রভাবে মাঠ পর্যায়ে বন বিভাগের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এক পদের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীকেও পালন করতে হচ্ছে বাড়তি দায়িত্ব। এছাড়া দীর্ঘদিন পদোন্নতি স্থবির থাকায় কাজের বাড়তি চাপ এবং নিয়মানুযায়ী পদোন্নতি না হওয়ায় বন কর্মীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন ফরেস্টার জানান, তিনি যে বিভাগের অধীনে কাজ করছেন, সেই বিভাগে কোনো ফরেস্ট রেঞ্জার নেই। যে কারণে তাকেও বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসাবে। কিন্তু চাকরি জীবনে দীর্ঘ দুই দশক পার হলেও এখনো তাদের অনেকেরই পদোন্নতি হয়নি। নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়মমাফিক অনুসরণ করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

আরও