চট্টগ্রাম অঞ্চল পান চাষের জন্য বিখ্যাত। পান বিক্রির জন্য মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট বাজারে গড়ে উঠেছে আড়ত। পানের বারৈ অর্থাৎ পান বিক্রেতারাই বারইয়ারহাট বাজারটির নামকরণ করেন। সে থেকে সরকারিভাবে বাজারটির নাম হয় বারইয়ারহাট। পান চাষের সুনাম থাকলেও গত এক দশকে মিরসরাইয়ে চাষ কমেছে ৯৫ শতাংশ।
হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বারইয়ারহাটের মেম্বার পানের আড়তের স্বত্বাধিকারী ইফতেখার উদ্দিন পিন্টু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আগে বারইয়ারহাটে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পান বিক্রির জন্য আনতেন চাষীরা। এখন তা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। তবে পাইকারি বিক্রির জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে এখানে পান নিয়ে আসেন চাষীরা।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, একসময় উপজেলার হিঙ্গুলী, দুর্গাপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পান চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। ২০১৩ সালে মিরসরাইয়ে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হেক্টরে। ২০১৫ সালে ১০ হেক্টর চাষ কমে নেমে আসে ৪০ হেক্টরে। ২০১৬ সালে চাষ হয় ১৫ হেক্টর, ২০১৭ সালে ১০, ২০১৮ সালে ১০ এবং ২০১৯ সালে ৮ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। এরপর থেকে উৎপাদন আর বাড়েনি। ২০২০-২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে শুধু হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পান চাষ হয়।
পানচাষীদের অভিযোগ, প্রচুর বৃষ্টি ও শীতে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। এছাড়া দিন দিন বাঁশ, ছনসহ পান চাষের বিভিন্ন উপকরণের দামও বেড়ে যাওয়ায় চাষীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ে পান চাষের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। পানচাষীদের জন্য আর্থিক কোনো সুযোগ কিংবা প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকায় আমরা শুধু পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
স্থানীয় বাজারগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এক বিড়া (৭০টি) পান বিক্রি হচ্ছে ৫০-১০০ টাকায়। তবে শীতে কিছুটা দাম বাড়লেও বর্ষায় কমে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। উপজেলার বারইয়ারহাট ও মিঠাছড়া বাজারে সপ্তাহে তিনদিন পানের বাজার বসে। বারইয়ারহাট বসে শনি, সোম ও বৃহস্পতিবার। আর মিঠাছড়া বাজারে বসে রোববার ও বৃহস্পতিবার। একসময় দুই বাজারে প্রতি হাটবারে প্রায় কোটি টাকা লেনদেন হতো বলে জানান আড়তদাররা। এখন তা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। পানের বরজ করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে বাঁশ, ছন ও খৈলের। অথচ এগুলোর সংকট দেখা দিয়েছে। ভাদ্র থেকে আশ্বিন পর্যন্ত খৈলের প্রয়োজন পড়ে। এগুলো না দিলে পান গাছের মূলে পচন ধরে। পান চাষে ব্যবহৃত বাঁশের খুঁটি ও ছন পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা হয়। বন বিভাগ সেখানে বাগান করায় বাঁশ ও ছন সংকট দেখা দিয়েছে।
হিঙ্গুলী গ্রামের পানচাষী প্রকাশ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মিরসরাইয়ে দিন দিন পান চাষ কমে যাচ্ছে। আমি চলতি বছর মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছি। পান চাষের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এছাড়া সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না যাওয়ায় চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা।’