রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলীতে নিপন চাকমা (৩৫) নামে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সাড়ে ৯টা দিকে বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বোধিপুর এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন নিপন। রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে এসে ইউপিডিএফ কর্মী নিপন চাকমাকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নিপন চাকমা বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালুখালী গ্রামের কমলা কান্তি চাকমা ছেলে।
হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জ্ঞান জ্যোতি চাকমা জানান, বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গতকাল (শনিবার) রাতে কনসার্টের অনুষ্ঠান চলাকালে রাত আনুমানিক দশটার দিকে একজনকে গুলি করে মারা হয়েছে।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মুখপাত্র অংগ্য মারমা জানান, শনিবার রাতে বাঘাইছড়ি বঙ্গলতলীতে আমাদের এক কর্মীকে গুলি করে হত্যার বিষয়টি শুনেছিলাম। নিহতের পরিচয় এবং কিভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সেটি এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আহমেদ জানান, শুনেছিলাম শনিবার রাতে বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ইউপিডিএফএর দলের সঙ্গে তাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলি হয়েছিল। ঘটনার রাতে এবং আজ (রোববার) সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো লাশ খুঁজে পায়নি। তবে আমরা তদন্ত করছি।
তবে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরই স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে গুলিবিদ্ধ মরদেহটি নিয়ে রাখা হয়েছে। নিপণ চাকমা ওরফে চোগা ইউপিডিএফের সামরিক শাখার 'গুরুত্বপূর্ণ নেতা' ছিলেন।
এদিকে, রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১১টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউপিডিএফ।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক অক্ষয় চাকমা জানিয়েছেন, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলীতে গতকাল শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে (নব্য মুখোশ) সন্ত্রাসীরা নিপন চাকমা (৩৫) নামে ইউপিডিএফের এক সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। নিহত নিপন চাকমা বাঘাইছড়ির পশ্চিম বালুখালী গ্রামের কমলা কান্তি চাকমার ছেলে। তিনি বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় একদল সশস্ত্র ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলযোগে বঙ্গলতলীতে এসে ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমার ওপর গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।
ইউপিডিএফ নেতা অক্ষয় চাকমা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে 'কাপুরুষোচিত' ও 'ন্যাক্কারজনক' উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করলেও খুনিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তিনি ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানান।
এর আগে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় গুলি করে ইউপিডিএফের চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন ত্রিপুরা।
পানছড়ির চার খুনের দেড় মাসের মাথায় গত ২৪ জানুয়ারি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় আরও দুজনকে হত্যা করা হয়। তখন মারা যান ইউপিডিএফ সদস্য রবি কুমার চাকমা ও শান্ত চাকমা ওরফে বিমল। ৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় আরও দুজন খুন হলেন। নিহত হলেন ইউপিডিএফ সদস্য দীপায়ন চাকমা ও আশুক্য চাকমা ওরফে আশীষ (৪৫)।
সর্বশেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে একই উপজেলায় ঘাতকের বুলেটে খুন হলেন ইউপিডিএফের আরেক কর্মী। এ নিয়ে তিন মাসের মধ্যেই পাহাড়ে ইউপিডিএফের ৯ নেতাকর্মী প্রাণ হারালেন প্রতিপক্ষের গুলিতে।