জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে সভা শেষে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম।
উপাচার্য
বলেন, প্রক্টরিয়াল টিমের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের
৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের
শিক্ষার্থী মো. মুরাদ হোসেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির
হাসান সাগর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ.এস.এম. মোস্তফা
মনোয়ার সিদ্দিকী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. হাসানুজ্জামানকে
ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি মুরাদ সিদ্দিকী, সাব্বির হাসান ও সাগর
সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। আর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ পরানের
সনদ স্থগিত করা হয়েছে।ক্যাম্পাস বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করা
হয়েছে। আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। তারা বের
না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। গঠিত কমিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা
নেয়ার সুপারিশ করবে বলেও জানান উপাচার্য।
উপাচার্য
আরো জানান, বহিরাগত দম্পতির সাথে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়ে প্রণীত প্রক্টরিয়াল
বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করতে
৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা করা হয়েছে। এতে সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. অজিত
কুমার মজুমদারকে সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) মাহতাব-উজ-জাহিদকে সদস্য সচিব করা
হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান এবং
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক। ১৫ (পনের) কর্মদিবসের মধ্যে
তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া
এরই মধ্যে যাদের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা
শেষ হয়েছে সেসব শিক্ষার্থীদের এবং অবৈধভাবে হলে অবস্থানরত অন্যান্য শিক্ষার্থী ও পোষ্যদের
৫ কর্মদিবসের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। হল ত্যাগ না
করলে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ক্যাম্পাসে
বহিরাগতদের প্রবেশে নিষিদ্ধ করা এবং ভাসমান দোকান সরিয়ে দেয়ার জন্য নিরাপত্তা ও এস্টেট
শাখাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে অনুমোদনহীন অটোরিকশা
চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগীর
স্বামীর করা মামলার প্রেক্ষিতে সাভার মডেল থানা পুলিশ ও আশুলিয়া থানা পুলিশ যৌথভাবে
অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক
সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান
বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান।এছাড়াও পলাতক রয়েছেন মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে
আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী
মো. মুরাদ।
ঢাকা
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, কিছুদিন ক্যাম্পাসে থাকবেন
বলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে মামুনের কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার জন্য স্ত্রীকে বলতে বলেন।
স্বামী তার স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। এদিকে ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের
৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে রেখে মারধর করেন অভিযুক্তরা। অন্যদিকে মুস্তাফিজ ও মামুন
ভুক্তভোগী নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ওই নারী ও
তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হয়।