বিভিন্ন সময় সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্তি পেয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মুহুরী প্রকল্প এলাকায় মৎস্য জোন গড়ে তুলেছেন চাষীরা। সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৩৮৫ একর জমিতে মৎস্য জোন রয়েছে। তবে ভূমি নিয়ে চাষীদের সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে দেখা দিয়েছে বিরোধ।
মৎস্যচাষীদের অভিযোগ, বেজার একের পর এক উচ্ছেদ অভিযানে হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য জোন। অবৈধভাবে গড়ে তোলা মৎস্য ঘের উচ্ছেদ করতে গিয়ে বেজা কর্তৃপক্ষ মূলত বৈধ খামারিদের ক্ষতি করছে। ঘেরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে মাছের উৎপাদন কমতে পারে। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে শত শত খামারির।
বেজা কর্তৃপক্ষ বলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মৎস্য ঘের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, মৎস্যচাষীদের সঙ্গে জমির বিরোধ নিরসন করা উচিত বেজা কর্তৃপক্ষের। কারণ একটি শিল্প গড়তে অন্য একটি শিল্প ধ্বংস করা মোটেও কাম্য নয়।
মিরসরাই মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪৮ হাজার ২২৫ টন। যার বাজার মূল্য ৯৬৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব মিঠা পানি মাছের সিংহভাগ উৎপাদন হয়েছে ওসমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নে। গত পাঁচ বছরে মিরসরাইয়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে আট হাজার টন। ২০১৮ সালে উপজেলায় মাছ উৎপাদন হয় ৩৯ হাজার ৫৪৮ টন। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৪৬০ টনে। ২০২০ সালে উৎপাদন হয় ৪৪ হাজার ৭৪২ টন। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৮১০ টনে। ২০২২ সালে উৎপাদন হয় ৪৮ হাজার ২২৫ টন। এভাবে মৎস্য উৎপাদন বাড়লেও হঠাৎ বেজার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে মাছের ঘের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ঘেরগুলো ধ্বংস করার কথা ছিল কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুরোধে নির্বাচন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। মাছের ঘেরগুলো ধ্বংস করা হলে উৎপাদন ব্যাপক ব্যাহত হবে। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়বেন শত শত খামারি।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মিরসরাই ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকার ইছাখালী ও বাঁশখালী মৌজায় সমুদ্রতীরে জেগে ওঠা চর বন্দোবস্ত দেয় সরকার। প্রথম ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মাঝে ১ হাজার ২০০ একর। পরে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০০ একর, চিংড়িচাষীদের মাঝে ১ হাজার ৩৮৫ একর এবং সর্বশেষ ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ভূমিহীনদের মাঝে ২ হাজার ৫০০ একর ভূমি বন্দোবস্ত দেয় সরকার। বন্দোবস্ত পাওয়া ৫ হাজার ৩৮৫ একর ভূমিতে সমন্বিত মাছ চাষ শুরু করেন বন্দোবস্ত গ্রহীতারা।
ইছাখালী সমবায় মৎস্য সমিতির সভাপতি নুরুল আবছার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার বারবার বলছে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে কোনো পুকুর বা ডোবা যাতে খালি পড়ে না থাকে। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর থেকে এখানে মাছ চাষ চলছে। এটি এখন মৎস্য জোনে রূপান্তর হয়েছে। আমরা এখান থেকে বছরে ৪৯ হাজার টন মাছের জোগান দিচ্ছি। বেজা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব অন্যায়ভাবে কোনো মৎস্য ঘের উচ্ছেদ না করা হয়। অধিগ্রহণ করা জমি চিহ্নিত না করে বেজা অভিযান পরিচালনা করায় আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেজার উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়াছিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে কয়েকজন ব্যক্তি মাছের ঘের তৈরি করেছে। আমরা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের অপসারণ করছি।’