লেবাননে অবস্থানরত বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার থেকে এক লাখ। নানা জটিলতায় তাদের অনেকেই অনিয়মিত বা অবৈধ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে সেখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবেচনায় বাংলাদেশী যেসব অনিয়মিত প্রবাসী দেশে ফিরতে চান, তাদের বহির্গমন বা এক্সিট ভিসাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বছরভিত্তিক আর্থিক জরিমানা মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। যুদ্ধকালীন অসুবিধার কথা বিবেচনা করে লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ উদ্যোগে এ জরিমানা মওকুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নির্ধারিত বহির্গমন ফি অর্ধেক করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে লেবানন কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় অনিয়মিত প্রবাসীরা দেশে প্রত্যাবর্তন করতে চাইলে ভিসা প্রক্রিয়া ফি হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি দপ্তরে তাদের ৫৫ ডলার সমপরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
এরই মধ্যে এ সুবিধার আওতায় নিবন্ধিতদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লেবানন থেকে দেশে ফিরতে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৮০০ জন। তাদের মধ্যে ১৬৭ জন ছাড়া কারো বৈধ কাগজপত্র নেই। আগামীকাল এ নিবন্ধিতদের মধ্যে দেশটি থেকে প্রথম ফ্লাইটে ৫৩ এবং ২২ অক্টোবর ৫৮ জন ঢাকায় আসবেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে লেবাননে অবৈধ হয়ে পড়া প্রবাসীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরতে চাচ্ছেন। বৈরুতে অবৈধভাবে অবস্থানরত প্রবাসী মুরসালীন মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভাগ্য ফেরানোর আসায় বিদেশে এসে অবৈধ হয়ে পড়েছি। এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছি। যুদ্ধাবস্থায় অবৈধ প্রবাসীদের জরিমানা মওকুফ করার উদ্যোগটি ভালো। যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চাই। পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারো চোখে ঘুম নেই। কখন কী হয় এটি নিয়ে সবাই চিন্তিত।’
লেবানন থেকে ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের মধ্যে ২০০ জনকে ভাড়া করা ফ্লাইটে ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কাজ করছে বলে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের জানান অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি জানান, অন্যদের জন্য সরকার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে। প্রতিদিন ৫০ জনের মতো আসতে পারবেন। বৈরুত থেকে ৫০ জনের বেশি আসনের উড়োজাহাজ না পাওয়ায় সবাইকে উড়োজাহাজে আনার নিশ্চয়তা নেই। এজন্য সমুদ্রপথে তুরস্কের মিরসিন বন্দরে এনে পরে সেখান থেকে ফ্লাইট ধরে দেশে আনার বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে।
বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছায় দেশে আসতে আগ্রহী যেসব প্রবাসী এরই মধ্যে ফরম পূরণ করে দূতাবাসে আবেদন করেছে তাদের ২০ অক্টোবর রোববারের (আগামীকাল) মধ্যে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে দূতাবাসের অস্থায়ী কনস্যুলার ও কল্যাণ সেবা কেন্দ্র নর্থ বৈরুতের মাসরাফ স্কেন-ডলফিন সেন্টার বিল্ডিং চতুর্থ তলায় মূল পাসপোর্টসহ উপস্থিত থাকতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ওই সময়ের মধ্যে মূল পাসপার্ট জমা দিতে ব্যর্থ হলে, দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় উড়োজাহাজে করে নিকটবর্তী সময়ে দেশে ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। এছাড়া জেনারেল সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ থেকে বহির্গমন ভিসা প্রদান করা হলে ভিসা প্রক্রিয়ার ফি বাবদ জমাকৃত অর্থ ফেরত দেয়া হবে। আর তথ্যের গরমিল, অভিযোগ বা মামলা থাকলে বহির্গমন ভিসা প্রদান না করার আশঙ্কা আছে। এক্ষেত্রে ভিসা প্রক্রিয়া ফি বাবদ জমাকৃত অর্থ ফেরত দেয়া সম্ভব হবে না।