২০২১ সাল

একটি পিএইচডিও দিতে পারেনি ৩১ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন হয় মূলত পিএইচডি প্রোগ্রাম ঘিরে। যদিও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি (ডক্টরেট অব ফিলোসফি) গবেষণার চিত্র খুবই বেহাল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে,

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন হয় মূলত পিএইচডি প্রোগ্রাম ঘিরে। যদিও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি (ডক্টরেট অব ফিলোসফি) গবেষণার চিত্র খুবই বেহাল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে দেশে ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ওই বছর এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৫৩ গবেষককে পিএইচডি দেয়া হয়। যদিও বাকি ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরে একটিও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করতে পারেনি।

উচ্চশিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য বড় আকারের আর্থিক প্রণোদনার স্কলারশিপ ফেলোশিপ রয়েছে। যদিও দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরনের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও পিএইচডি ফেলোশিপের সংখ্যা তার আর্থিক প্রণোদনা খুবই নিম্নমানের। পাশাপাশি উন্নত গবেষণা অবকাঠামো না থাকাকেও পিএইচডি গবেষণা কম হওয়ার অন্যতম কারণ বলছেন শিক্ষাবিদরা।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি ফেলোশিপ স্কলারশিপের আর্থিক প্রণোদনার হার অনেক বেশি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেটা অনেক কম। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ধরনের বৃত্তি এখনো চালুই হয়নি। আপনি দেখবেন, আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশে পিএইচডি করতে যায়, তাদের বেশির ভাগই সঙ্গে পরিবার নিয়ে যায়। অর্থাৎ স্কলারশিপের অর্থ এতই বেশি যে পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করার সুযোগ হয়। আমার কাছে মনে হয়, আর্থিক দিকটাই দেশের পিএইচডি গবেষণায় পিছিয়ে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ।

খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরো বলেন, পিএইচডি গবেষণা কম হওয়ার আরেকটি বড় কারণ অধ্যাপক কিংবা জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অনীহা। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকদের গবেষণা প্রকাশনার বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই তাদের পিএইচডি শিক্ষার্থী নিতে হয়। যদিও বাংলাদেশে এখনো সে ধরনের বাধ্যবাধকতার সংস্কৃতি চালু হয়নি। এছাড়া গবেষণাগারসহ সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতিও পিএইচডি গবেষণাকে পিছিয়ে রাখছে।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালে কোনো পিএইচডি ডিগ্রিই দিতে পারেনি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি); খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়; চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়; যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ; বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।

তালিকায় আরো রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ; শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়; খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি; চাঁদপুর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ; হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।

এক বছরে একটি পিএইচডি ডিগ্রিও না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ২০ থেকে ২৫ জন গবেষক রয়েছেন। তাদের অনেকে এরই মধ্যে তাদের পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছেন। ২০২১ সালে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এক ধরনের স্থবিরতা ছিল। আর যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও কিছুটা সময় লেগে যায়। এসব কারণে ওই বছর কাউকে ডিগ্রি দেয়া হয়নি। আগামীতে এক্ষেত্রে অবস্থানটা একদম শূন্যে থাকবে না।

এদিকে ডিগ্রি প্রদানের দিক থেকে ১৬টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পিএইচডির শীর্ষে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে ৯৫ জন গবেষককে তাদের গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি দেয়া হয়েছে ৮৫ জন গবেষককে। আর ৬৮টি পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শীর্ষ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে পিএইচডির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪৭, যা ২০২১ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যায়গুলোর দেয়া মোট পিএইচডির ৭০ শতাংশ। ইউজিসির গত কয়েক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন ৬৪১ জন। ২০১৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছিলেন ২৩৩ জন। ২০১৮ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়েছে ৪০০ জনকে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি এমফিল ডিগ্রি দেয়ার অনুমোদন নেই। সে হিসেবে পিএইচডি গবেষণার মূল কাজটি পড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর। তাই ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরে একটি পিএইচডি ডিগ্রি হোল্ডারও বের হয়নি, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেননা মৌলিক গবেষণা ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেতে পারে না। আমার কাছে মনে হয়, গবেষণা খাতে বরাদ্দ ব্যয়ের বিষয়টি এখনো গোছানো কোনো কাঠামোয় দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি।

আরও