কানপুর টেস্টে হেরেই গেল বাংলাদেশ

পাকিস্তানকে তাদেরই মাঠে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হারিয়ে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ এক মাসের ব্যবধানে দেখল মুদ্রার উল্টো পিঠও। ভারতের কাছে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারল তারা। কানপুর টেস্টে ৭ উইকেটে হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তাও দুদিনেরও কম সময়ের খেলায় বাংলাদেশকে হারিয়ে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের শীর্ষস্থান সংহত করল রোহিত শর্মার দল।

পাকিস্তানকে তাদেরই মাঠে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হারিয়ে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ এক মাসের ব্যবধানে দেখল মুদ্রার উল্টো পিঠও। ভারতের কাছে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারল তারা। কানপুর টেস্টে ৭ উইকেটে হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তাও দুদিনেরও কম সময়ের খেলায় বাংলাদেশকে হারিয়ে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের শীর্ষস্থান সংহত করল রোহিত শর্মার দল। 

গতকাল পঞ্চম ও শেষ দিন ফের ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে স্বাগতিকদের মাত্র ৯৫ রানের টার্গেট দিতে সমর্থ হয় সফরকারীরা। ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৭.২ ওভারেই এ রান তুলে নেয় রোহিতের দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের বিপক্ষে জয় অধরাই থাকল। এখন পর্যন্ত ১৫ টেস্টের লড়াইয়ে ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এদিকে দেশের মাঠে টানা ১৮ ম্যাচ জিতে রেকর্ড আরো সংহত করেছে ভারত। এর আগে চতুর্থ দিন নয়টি রেকর্ড গড়ে স্বাগতিকরা। দ্রুততম দলীয় ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ ও ২৫০ রানের রেকর্ড গড়ে তারা। বিস্ফোরক সেই ব্যাটিংই শেষ পর্যন্ত অভাবনীয় এক জয় এনে দিল ‘মেন ইন ব্লু’দের। 

গতকাল সকালে ২ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম সেশনের শেষ বলে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায়। ফলে খুবই সহজ টার্গেটের সামনে পড়ে ভারত। মেহেদী হাসান মিরাজ দুটি ও তাইজুল ইসলাম একটি উইকেট শিকার করলেও ভারতের জয় রুখে দেয়া যায়নি। জশস্বী জয়সোয়াল (৫১) ও বিরাট কোহলির (২৯*) ব্যাটে ভর দিয়ে টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। 

বৃষ্টি বাধায় প্রথম দিন ৩৫ ওভারের খেলা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতার কারণে কোনো খেলাই হয়নি। কিন্তু ম্যাচটি নিষ্প্রাণ ড্র হতে দিল না তারকাখচিত ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে গড়া ভারত। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চতুর্থ দিনের খেলা দারুণ জমল, দুই দলের ১৮ উইকেটের পতন ঘটল। এ পথে একগুচ্ছ রেকর্ড দেখল কানপুর। 

চতুর্থ দিনের দাপটই ভারতকে জয়ের ভিত গড়ে দেয়। গতকাল পঞ্চম ও শেষ দিন এক সেশনেরও বেশি সময় হাতে রেখে তারা বিজয়ী হয়েছে। পাঁচদিন মিলে ৪৫০ ওভারের খেলা হওয়ার কথা। যদিও সেখানে খেলা হয়েছে মাত্র ১৭২.২ ওভারের, যা দুদিনেরও কম! শেষ দিন ৪৫ ওভারের মতো খেলা বাকি ছিল। এ সময়ের মধ্যেই দাপট দেখিয়ে জিতল ভারত। মূলত রোহিত শর্মারা হারালেন বৃষ্টি, সময় আর বাংলাদেশ এ তিন প্রতিপক্ষকে। 

এর আগে স্পিন কিং রবিচন্দ্র অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা এবং রহস্যময় গতি বোলার জশপ্রীত বুমরাহ প্রত্যেকেই তিনটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ১৪৬ রানে আটকে দেন। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন সাদমান ইসলাম, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান মুশফিকুর রহিমের ৩৭। 

২৬ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে গতকাল দিনের শুরুতেই ভেঙে যায় মুমিনুল-সাদমান জুটি। ৮ বলে মাত্র ২ রান করে অশ্বিনের শিকার হন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল। এরপর অধিনায়ক শান্ত ও সাদমানের জুটিতে লিড নিতে থাকে বাংলাদেশ। তবে দলীয় ৯১ রানে শান্তর বিদায়ে ভেঙে যায় ৫৫ রানের এ জুটি। ৩৭ বলে ১৯ রান করে জাদেজার বলে বোল্ড হন শান্ত।

এর পরই ব্যাটিং ধস শুরু। স্কোরটা ৯১/৩ থেকে দেখতে না দেখতেই হয়ে গেল ৯৪/৭! শান্তর পর একে একে সাজঘরে ফিরে যান সাদমান, লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। এ চারজনের তিনজনই অর্থোডক্স স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার শিকার। সাদমান অর্ধশতক তুলে আকাশ দীপের বলে, লিটন ৮ বলে ১ রান করে জাদেজার বলে ও সাকিব শূন্য রানে জাদেজার বলে আউট হয়েছেন। 

রাওয়ালপিন্ডি জয়ের নায়ক মুশফিক ও মিরাজ ২৪ রানের জুটি গড়ে খানিকটা স্থিতি আনার পর বিদায় ঘটে মিরাজের। বুমরাহর বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দেন মিরাজ। এরপর নবম উইকেটে তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ১২ ও দশম উইকেটে খালেদ আহমেদকে নিয়ে ১৬ রানের জুটি গড়ার পর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে মুশফিকের। লাঞ্চের আগে বুমরাহর করা শেষ বলটি তিনি রক্ষণাত্মক খেলতে পারতেন, উল্টো বাউন্ডারি মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। 

প্রথম ইনিংসে মুমিনুলের সেঞ্চুরির পরও ২৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর চতুর্থ দিন বিকালে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান ভারতীয়রা। তবে সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। ৫২ রানের লিড নেয় রোহিতের দল। শেষ দিন জেতা কঠিন হলেও ড্র করা অসম্ভব ছিল না। তবে আরেকবার আত্মাহুতির মিছিল করে শান্তরা হেরেই গেলেন। 

প্রথম ইনিংসে ৫১ বলে ৭২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ বলে ৫১ রান করে ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ভারতের ওপেনার জশস্বী জয়সোয়াল, যিনি সিরিজে ১২৮.১২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন এবং প্রথম ভারতীয় হিসেবে কোনো টেস্টের উভয় ইনিংসেই ৫০ বলের কম খেলে ফিফটি করেছেন। এছাড়া ১১৪ রান করার পাশাপাশি ১১ উইকেট শিকার করে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ভারতের রবিচন্দ্র অশ্বিন। 

হার শেষে বাংলাদেশ দলনায়ক শান্ত বলেছেন, ‘আমরা ভালো ব্যাট করিনি। আপনি যদি ব্যাটারদের দিকে তাকান, দেখবেন তারা সবাই ৩০-৪০ বল খেলে আউট হয়ে গেছে। অন্তত একজন ব্যাটারের তো বড় ইনিংস খেলতেই হয়।’ 

মাত্র ৩১২ বল মোকাবেলা করে টেস্ট জিতেছে ভারত, যা কম বল খেলে জয়ের দিক থেকে ইতিহাসে চতুর্থ। সবচেয়ে কম ২৭৬ বল খেলে জয়ের রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের। ১৯৩৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল তারা। এছাড়া এ বছর কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৮১ বল খেলে হারিয়েছিল ভারত। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েকে ৩০০ বল মোকাবেলায় হারানোর কৃতিত্ব দেখায় প্রোটিয়ারা। তবে রেকর্ড নয়, ভারতের চোখ পয়েন্ট টেবিলে। সিরিজসেরা অশ্বিন বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেবিলের বিবেচনায় এটি বিরাট এক জয়।’ 

এবার দুই দলের টি-টোয়েন্টি লড়াই। ৬, ৯ ও ১২ অক্টোবর তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২৩৩ ও ১৪৬। ভারত: ২৮৫/৯ (ডি.) ও ৯৮/৩ (জয়সোয়াল ৫১, কোহলি ২৯*; মিরাজ ২/৪৪, তাইজুল ১/৩৬)। ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: জশস্বী জয়সোয়াল (ভারত)। প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: রবিচন্দ্র অশ্বিন (ভারত)। সিরিজ: ভারত ২-০-তে জয়ী।

আরও