সচিব ও সিনিয়র সচিবদের প্রায় ৯৫ শতাংশই প্রশাসন ক্যাডারের

আওয়ামী সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক রূপ দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে অ্যাডমিন ক্যাডাররাই

বিগত সরকারের প্রশাসনে সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে নিয়োজিতদের প্রায় ৯৫ শতাংশই ছিল অ্যাডমিন বা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অন্তর্বর্তী সরকারেও এখন পর্যন্ত যারা সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের সবাই অ্যাডমিন ক্যাডারের।

বিগত সরকারের প্রশাসনে সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে নিয়োজিতদের প্রায় ৯৫ শতাংশই ছিল অ্যাডমিন বা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অন্তর্বর্তী সরকারেও এখন পর্যন্ত যারা সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের সবাই অ্যাডমিন ক্যাডারের। 

আবার বর্তমান সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশির নিয়োগ হয়েছিল বিগত সরকারের আমলে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত অপরাধগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ক্ষেত্রেও দায়ী করা হয় তাদের। অভিযোগ আছে, বিতর্কিত নির্বাচন থেকে শুরু করে যেসব কর্মকাণ্ড গত সরকারকে স্বৈরতান্ত্রিক রূপ দিয়েছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রেও এ অ্যাডমিন ক্যাডাররাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। 

বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে সময়সীমা বাড়িয়ে যাওয়া ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপসারণেরও দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আওয়ামী লীগ আমলের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে। এরপর বর্তমান সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক এ কর্মকর্তাদের সবাই আবার অ্যাডমিন ক্যাডারের। 

এর মধ্যে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় গত ১৮ আগস্ট। তাদের মধ্যে ড. শেখ আব্দুর রশিদকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে, মো. এহছানুল হককে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে, ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে জননিরাপত্তা বিভাগে, ড. নাসিমুল গনিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগে এবং এম এ আকমল হোসেন আজাদকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পওয়া এ পাঁচ কর্মকর্তাই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তা। একইভাবে গত ২৮ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে মোখলেসুর রহমানকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনিও একই ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য মোট ২৬টি সার্ভিস ক্যাডারে বিভক্ত কর্মবিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো প্রশাসন, কৃষি, আনসার, নিরীক্ষা ও হিসাব, সমবায়, শুল্ক ও আবগারি, পরিবার পরিকল্পনা, মৎস্য, খাদ্য, পররাষ্ট্র, বন, সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, পশুসম্পদ, পুলিশ, ডাক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, রেলওয়ে প্রকৌশল, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, সড়ক ও জনপথ, পরিসংখ্যান, কর, কারিগরি শিক্ষা এবং বাণিজ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মবিভাগ হিসেবে পরিচিত প্রশাসন ক্যাডার। 

সরকারের উপসচিব পদে নিয়োগ কিংবা পদোন্নতিতে ৭৫ শতাংশ কোটা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। আর ২৫ শতাংশ পূরণ করা হয় বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে প্রভাবশালী পদগুলোয় যেমন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ইত্যাদি সবসময়ই প্রশাসন ক্যাডার দ্বারা পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ডিডি এলজি, জোনাল সেটলমেন্ট অফিসার ইত্যাদি পদও প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত পদ। অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুধু মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ের অধীনের কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থায় সমমানের পদে নিয়োগ লাভ করতে পারেন।

বিষয়টি নিয়ে অ্যাডমিন ছাড়া অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ ক্ষোভও রয়েছে। পদোন্নতি, পদায়ন, নতুন পদ সৃষ্টিসহ বেশকিছু দাবি তুলে বর্তমানে অন্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে একটি জোট তৈরি করেছেন। জোটের নাম দেয়া হয়েছে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। রাজধানীর ডিআরইউ মিলনায়তনে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে জোটটি। 

‘ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে জোটের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেকোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ পদের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই দিতে হবে। এসব পদে অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বিসিএস ক্যাডারে বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশাসন ঢেলে সাজাতে এ পরিষদ গঠন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সরকারের আমলাতন্ত্রে সংস্কার না আনলে সেটি পূরণ হবে না। বরং এর মধ্য দিয়ে এক কর্তৃত্ববাদের অবসান ঘটানোর পরও আরেক কর্তৃত্ববাদের উত্থান ঘটার আশঙ্কা ও ঝুঁকি থেকেই যাবে। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক সংস্কৃতি। এখানে বিভিন্ন নেতিবাচক বিষয় রয়েছে। দলীয়করণ থেকে শুরু করে ক্ষমতার প্রভাব ধরে রাখতে এ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করা হয়েছে। ফলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে এক ধরনের ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এমন হলে তা শুধু আমাদের দেশ নয়, অন্য যেকোনো দেশেও প্রশাসনিক কার্যক্রমে একটি ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র তৈরি করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা উঠে এসেছে। মূল জিনিসটা হলো বৈষম্য দূর করা। সর্বস্তরের বৈষম্যহীন সমাজ তৈরি করতে হলে প্রশাসন থেকে জিনিসটা শুরু করতে হবে। রাজনীতি, গভর্ন্যান্স, আমলাতন্ত্র—এসব জায়গার বৈষম্য দূর করতে হবে। দায়িত্বশীলরা নিজের জায়গায় থেকে এ শিক্ষা যদি গ্রহণ না করে, তাহলে প্রত্যাশা পূরণ তো হবেই না, বরং একটা কর্তৃত্ববাদের অবসান ঘটিয়ে আরেকটি কর্তৃত্ববাদের দিকে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীর্ষ আমলাদের একটি অংশের বিরোধিতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো ২৭ বছর ধরে স্থবির হয়ে আছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী গত পাঁচ দশকে প্রশাসনিক সংস্কারে দুই ডজনেরও বেশি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি কমিশন ও কমিটি গঠন। সংস্কারের উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে দক্ষ, যোগ্যতাভিত্তিক ও সেবামুখী বেসামরিক প্রশাসনের সুপারিশ উঠে এসেছিল। দক্ষতা ও স্বচ্ছতা উন্নয়নে বেশকিছু সংস্কারের প্রস্তাব কয়েক বছর ধরে আলোচনায়ও ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, গত পাঁচ দশকের বেশি সময়ে নেয়া সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বপরায়ণরা তাদের অবস্থান, প্রভাব, সুবিধা ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবেই দেখেছেন। ফলে শক্তিশালী ও কার্যকর সরকারি কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গঠিত কমিশনগুলোর বেশ কয়েকটি সুপারিশ বিভিন্ন সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট ২০১৮ পাস এবং সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা ইত্যাদি। কিন্তু বৈষম্য দূর করতে যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি ছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৈষম্য দূরীকরণে দরকার ন্যায়নীতি বোধ এবং কারো প্রতি যেন বৈষম্য না হয় সেটি নিশ্চিত করা। ন্যায়নীতি বোধটাই এখানে গাইডিং প্রিন্সিপাল। দলীয়করণ বা অন্য কোনো বিবেচনায় যাতে কেউ পক্ষপাতদুষ্টতার শিকার না হয়। দায়িত্বশীল যারা রয়েছেন বা যারা সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করব তারা জেনেশুনে কারো প্রতি অন্যায় করবেন না।’

প্রশাসনে সংস্কারের জন্য সর্বশেষ কমিশন গঠন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। সাবেক সচিব এটিএম শামসুল হকের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনটি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ নিয়ে এসেছিল। যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিষেবা এবং উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো তৈরিতে আরেকটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে এ-সংক্রান্ত কমিটি নতুন কমিশন গঠনে রাজি হয়নি।

প্রশাসন এখনো পরিচালিত হচ্ছে ১৯৮২ সালে সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার এনামুল হক খানের নেতৃত্বে গঠিত এনাম কমিশনের সুপারিশকৃত কাঠামোর অধীনে। ২০১৫ সালে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন তখনকার আন্তর্জাতিক চর্চার আলোকে বেসামরিক প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছিল। 

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে সরকারি এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিগত সময়ে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ কোটাভিত্তিক হওয়ায় মেধাবী প্রার্থীদের অনেকেই ঝরে পড়ত। ফলে সিভিল সার্ভিসকে মেধাভিত্তিক করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। অতীতে সরকারের নিয়োগ দেয়া পিএসসি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দিয়েছেন। এটা সিভিল সার্ভিসে মেধাশূন্যতা তৈরি করেছে। রাজনৈতিকভাবে নিয়োগের কারণে বেসামরিক প্রশাসনের মান ক্রমাগত কমেছে।’

এছাড়া ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থীর একাডেমিক অবদানকে বিবেচনা না করা, পরীক্ষার জন্য গাইড বই মুখস্থ করা, যান্ত্রিকভাবে উত্তর প্রদান, একেক ভাইবা বোর্ডে একেক ধরনের প্রশ্ন নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দেশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো প্রথাগত প্রশিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে। আন্তর্জাতিক মানের মাল্টিডিসিপ্লিনারি প্রশিক্ষণ, কেস স্টাডির ব্যবহার, সমস্যা সমাধানের উপায়, ই-লার্নিংয়ের মতো বিষয়গুলো প্রশিক্ষণে থাকে না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিভিল সার্ভেন্টদের পদোন্নতির রাজনৈতিকীকরণ হওয়ায় মেধা, যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও রুলস অব কন্ডাক্টের মতো অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সেবা দেয়ার মানসিকতায়ও ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। 

২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বে ছিলেন আলী ইমাম মজুমদার। জানা যায়, সে সময় প্রজাতন্ত্রের জনপ্রশাসন ঢেলে সাজানোর মূল কারিগর ছিলেন তিনি। এ আমলা অবসরে যান ২০০৮ সালে। এরপর ১২ আগস্ট তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পান। পরে ১৬ আগস্ট তিনি ব্যক্তিগত সহকারীর পরিবর্তে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রশাসন ঢেলে সাজানোর কাজে প্রধান উপদেষ্টাকে সহযোগিতা করছেন তিনি। আর এজন্য তিনি কাজে লাগাচ্ছেন তার একজন সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীকে।

ওই ব্যক্তিগত সহকারী সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এক দশকের কাছাকাছি সময় কাজ করেছেন। সেখানে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস ও তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার ঘনিষ্ঠ এ আমলা আগে ২০০৭-০৮ সালে আলী ইমাম মজুমদারের ব্যক্তিগত সহকারীর দায়িত্বও পালন করেছেন। আলী ইমাম মজুমদারের মতো তিনিও অ্যাডমিন ক্যাডারের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই কর্মকর্তা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তার লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। পরে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে দীর্ঘ সময় কর্মরত থাকার পর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর এক দশকের কাছাকাছি সময় তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন। 

আলী ইমাম মজুমদার ও তার এ সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীর পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ সচিব, জেলা প্রশাসক, এসপি পর্যায়ে যেসব রদবদল হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে এরই মধ্যে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষুণ্ন হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিও। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এ ক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণে বর্তমান সরকারের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্যাডার বৈষম্যের বিষয়ে শুনব, ওগুলো নিয়েও কাজ করব। মাত্র কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সবকিছুই হবে।’

আরও