মালয়েশিয়ায় যেতে কর্মীদের সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ৩১ মে। ছাড়পত্র পেয়েও প্রায় ১৭ হাজার কর্মী দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। এদিকে কর্মী পাঠানোর সময়সীমা না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম।
গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর অফিস কক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মোহাম্মদ হাশিমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সভা করেন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সভাশেষে সাংবাদিকের প্রশ্নোত্তরে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সময়সীমা না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন হাজনাহ মো. হাশিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ মালয়েশিয়ার সরকার ওই সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করবে কিনা, জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, ‘মালয়েশিয়া ১৫টি দেশ থেকে কর্মী নেয়। সবার ক্ষেত্রে একই সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে কিছু করা হয়নি। সব দেশের জন্য একই নীতি বজায় রাখতে চায় মালয়েশিয়া।’
হাইকমিশনার আরো জানান, প্রতিমন্ত্রী সময়সীমা পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি কুয়ালালামপুরে এ বার্তা পৌঁছে দেবেন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। আমার বিশ্বাস, মালয়েশিয়া আমাদের আবেদন বিবেচনা করবে।’
এদিকে গত মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরকার মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিযোগ জানাতে বলেছে। যাদের বিএমইটির কার্ড আছে তাদের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকার কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমরা ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কোন কারণে কর্মীরা যেতে পারেননি। কোথায় সমস্যা হয়েছে, কাদের দ্বারা এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে—এসব খুঁজে বের করার জন্যই আমরা তদন্ত কমিটি করেছি।’
বিএমইটির ছাড়পত্র না পাওয়া অনেক কর্মীর কী হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং যারা এজেন্টের মাধ্যমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন, এমনকি যারা ভিসা পাননি, তাদের ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে। তাদের কীভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারেও কাজ চলছে।’
এদিকে গতকাল জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কী সমস্যা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই আমরা আলোচনা করে ঠিক করি কত লোক যাবে, কীভাবে যাবে। তখনই দেখা যায় দেশের একশ্রেণীর লোক, যারা জনশক্তির ব্যবসা করে, তারা তড়িঘড়ি করে লোক পাঠানোর চেষ্টা করে।
এদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার কিছু লোকও যুক্ত আছে। এতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আবার সরকার যখন আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যায়, তখনই কিছু লোক ছুটে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যারা যায় তাদের কাজের ঠিক থাকে না, চাকরিও ঠিক থাকে না, বেতনের ঠিক থাকে না, সেখানে গিয়ে বিপদে পড়ে। এটা শুধু মালয়েশিয়া না, অনেক জায়গায় ঘটে।’
একই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বারবার আমি দেশবাসীকে বলেছি জমিজমা, ঘরবাড়ি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা খরচ করার দরকার নেই। যদি দরকার হয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। প্রয়োজনবোধে বিনাজামানতে ঋণ দেয়া হয়। সেখানে তাকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে সে যে যাচ্ছে তার চাকরিটা সুনির্দিষ্ট কিনা, এটা হলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে।’