চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না যক্ষ্মা। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত সভা ও সেমিনার করা হচ্ছে। তার পরও এক বছর কমলে, পরের বছর আবার বেড়ে যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত পাঁচ বছরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ হাজার ৮৭৯ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৩৬ জন। এছাড়া চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬২১ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে। এ নয় মাসে মারা গেছেন চারজন।
যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। একজন থেকে কমপক্ষে ১০ জনের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই এক নাগাড়ে দুই সপ্তাহ কাশি থাকলে দ্রুত যক্ষ্মা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অতিরিক্ত ধূমপান, মদপান, বদ্ধঘরে থাকলে যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত অসচেতনতার কারণেই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করা এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের উপজেলা সিডিপি ম্যানেজার খুরশিদ আলম বলেন, ‘যারা যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় তারা এক একটি বোমা। কারণ একজন যক্ষ্মা রোগী থেকে কমপক্ষে ১০ জন আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে।’
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি পেইজে (তিন মাস পর পর একটি পেইজ) প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কফ পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ৭৮২ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। ওই বছর মারা যান সাতজন। ২০১৯ সালে ১৩ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৫১ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে মারা যান ১২ জন। ২০২০ সালে করোনা থাকায় অনেকে ভয়ে ঘর থেকে বের হয়নি। তবু ওই বছর প্রায় ১৫ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৬৩ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মারা যান সাতজন।
২০২১ সালে প্রথম পেজে (জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত) ৫৬৩ নারী ও ৬২৫ পুরুষের কফ পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১৪০ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। দ্বিতীয় পেজে (এপ্রিল-জুন পর্যন্ত) ৪৯৬ নারী ও ১ হাজার ৬৬ জন পুরুষের কফ পরীক্ষা করা হলে শনাক্ত হয় ১৬৬ জন। তৃতীয় পেজে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ৪১৯ নারী ও ১ হাজার ৪৯৫ পুরুষের কফ পরীক্ষা করে রোগী পাওয়া যায় ২০৮ জন। চতুর্থ পেজে (অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১ হাজার ৬৪২ পুরুষ ও ১ হাজার ৩৩৫ নারীর কফ পরীক্ষা করে ২০৫ জনের শরীরে রোগটি শনাক্ত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আরো ২৭৪ রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৬৬৭ জনের কফ পরীক্ষা করে ৯৯৩ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মারা যান আটজন। ২০২২ সালে প্রায় ১৩ হাজার রোগীকে চারটি পেজে পরীক্ষা করে ৭১০ জনের শরীরের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। ওই বছর মারা যান দুজন। সর্বশেষ চলতি বছর জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনটি পেইজে প্রায় নয় হাজার রোগীকে পরীক্ষা করে ৬২১ জনের শরীরে যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন।
উপজেলা টিবি লেকটিজেন কন্ট্রোল অ্যাসিস্ট্যান্ট (টিএলসিএ) হুমায়ূন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রত্যেক যক্ষ্মা রোগীকে দুই, তিন ও পাঁচ মাস পর পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা ও ওষুধের জন্য কোনো অর্থ নেয়া হয় না। বেশি জটিল রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা ফৌজদারহাট হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরো জানা গেছে, জিন পরীক্ষার জন্য বেলজিয়াম থেকে একটি মূল্যবান মেশিন আনা হয়েছে। যাতে কোনো ত্রুটি ছাড়াই যক্ষ্মা পরীক্ষা করা হয়। অন্যান্য দেশে জীন পরীক্ষা করতে ৫০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে বাংলাদেশে বিনামূল্যে পরীক্ষাটি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার আবুতোরাব এলাকার এক যক্ষ্মা রোগী জানান, তার গলায় ফোলা দেখা দিলে তিনি বিভিন্ন ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ডাক্তারের পরামর্শ নেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার যক্ষ্মা শনাক্ত হয়। বর্তমানে তিনি মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিনামূল্যে ওষুধ চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিনহাজ উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিনামূল্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে নিয়মিত সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে।’