ড. সলিমুল্লাহ খান

প্রাথমিক শিক্ষা ১২ বছর করা উচিত

বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও লেখক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, একজন লোকের স্বৈরাচারী কার্যক্রম থেকে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয় না। মানুষকে মুখরোচক কথা বলে এক নেতা এক দেশ, ওমুককে জাতির জনক এ সমস্ত কথা বলে জনগণকে আকৃষ্ট করে তাদের আলোচনার ঊর্ধ্বে রেখে সমস্ত অপকর্মের লাইসেন্স দেয়াকেই বলা হয় ফ্যাসিবাদ। আজ যদি শিক্ষার্থীরা না জাগতো ২০২৪ সালের আর পরিবর্তন হতো না। হয়তো আমারো পঞ্চগড় আসতে আরো বিলম্ব হতো।

পঞ্চগড়ের প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন ‘কারিগর’ এর আয়োজনে সলিমুল্লাহ খানের একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, অনেকে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করা কি সঠিক? আমার মতে, রাজনীতি আমাদের সবার করা উচিত। বর্তমান যুগ বিশেষজ্ঞদের যুগ। আমাদের দেশে যারা বিশেষজ্ঞ হবেন তারা যদি দেশের ইতিহাস ভালোভাবে না জানেন, তাহলে তারা কী করে বিশেষজ্ঞ হবেন? বিজ্ঞানকেও প্রশ্নের মুখোমুখি করা উচিত। আমাদের দেশে যেভাবে বিজ্ঞান শেখানো হয় তার একটা বড় ত্রুটি হলো বিজ্ঞানের ইতিহাসটা শেখানো হয় না। যারা অ্যাটাম বোমা বানায় তারাও বিজ্ঞানী, যারা কেমিক্যাল দিয়ে মানুষ হত্যা করছে তারাও বিজ্ঞানী, যারা ভেজাল ওষুধ বানাচ্ছে তারাও বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। বিজ্ঞানের সঙ্গে ভাবাদর্শ জড়িত। তাই বিজ্ঞানের ইতিহাস না পড়া অন্ধের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার মতো। এখন বিজ্ঞান হয়ে গেছে গণতন্ত্রের মতো দুর্বৃত্তের শেষ আশ্রয়স্থল।

এসময় তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের দেশে ইংরেজি শিখতে ২০/২১ বছর লেগে যায়। এর কারণ ইংরেজি শেখানোর ভালো শিক্ষক নেই। অথচ ৩ বছরেই ইংরেজি শিখে ফেলার কথা। প্রাথমিক শিক্ষাকে কমপক্ষে ১২ বছর করা উচিত। পৃথিবীর সব দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রাথমিক শিক্ষার বয়স ১২ বছর। সবার জন্য মানবিক শিক্ষা থাকবে, নীতিগত শিক্ষা থাকবে, ধর্মীয় শিক্ষাও থাকবে। সকল মানুষের নিজের ভাষা শেখার অধিকার আছে। বাংলাদেশকে অনেকে গরিবের দেশ বলে, আসলে এটার পরিচালনা ব্যবস্থা গরিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এক করতে হবে। যদি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংস্কার না হয় তা হলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও হবে না। বৈষ্যম্যের গোড়াটাকে আলোচনায় আনতে হবে। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছে তাৎক্ষণিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আমাদের বৈষম্যের মূল স্থানগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ। কারিগরের নির্বাহী পরিচালক সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক ড. শেখ মেহদী মোহাম্মদ, পরিবেশ ও নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, ইউনিভার্সিটি অব অটোয়া কানাডার পিএইচডি ফেলো আব্দুল্লাহ আল মামুন।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের হাতে ক্রেষ্ট ও পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা পাতা তুলে দেয়া হয়। এসময় শিক্ষক শিক্ষার্থী ও পঞ্চগড়ের সুধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও