নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কৃষিজমিতে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা

কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে তা মানছেন উদ্যোক্তারা।

কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে তা মানছেন উদ্যোক্তারা। অনুমতির জন্য নামমাত্র কাগজ জমা দিয়েই শুরু করা হচ্ছে ইটভাটার কাজ। ভাটা মালিকদের দাবি, যে জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে তা এক ফসলি। কৃষক বলছেন, এসব জমিতে একাধিক ফসল হয়। অবশ্য নিয়মের বাইরে ইটভাটা নির্মাণ করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলার কৃষি ভাণ্ডারখ্যাত সুবর্ণচর উপজেলায় বর্তমানে ইটভাটা রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে সাতটি জিকজ্যাক, অন্যগুলো বাংলা। এসব বাংলা ভাটায় গাছ পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে আবার নতুন করে আরো তিনটি ভাটা গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।

সরজমিন দেখা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের কাঞ্চনবাজারসংলগ্ন ফসলি জমি ইটভাটা তৈরির জন্য প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। শুধু কাঞ্চন বাজার এলাকায় নয় উপজেলার পশ্চিম চর জব্বার, পাশের চরজুবলী ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকায় তিনটি নতুন ভাটা নির্মাণ করতে দেখা গেছে।

জসিম উদ্দিন নামে এক কৃষক জানান, ভাটাগুলোর কাজ শুরু করার সময় মালিকদের নিষেধ করা হলেও তারা কথা শোনেননি। উল্টো নিজেদের জমিতে যা খুশি তা করবে, কেউ বাধা দিলে চাঁদাবাজির মামলা দেবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এসব এলাকার প্রতিটি পরিবার কৃষিনির্ভর। নির্মাণাধীন ইটভাটার আশপাশে হাজার হাজার একর জমি, শত শত বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না ভাটা মালিকরা। প্রশাসনও নীরব। এভাবে ইটভাটা গড়ে উঠলে ভবিষ্যতে পুরো এলাকার কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। ভাটার ধোঁয়ায় ফসল ও গাছ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিষয়টি প্রশাসনে জানানো হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মাঝে মাঝে এসে ভাটা কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে নিষেধ করলেও বন্ধ করার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেউ।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কৃষিজমি বা জনবসতির আশপাশে ইটভাটায় নির্মাণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। তার পরও যদি কেউ অনুমতি ছাড়া ভাটা নির্মাণে উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে উপজেলার দুটি গ্রামে নতুন করে তাহেরা, মুক্তা ও আলিফ ব্রিকস নামে তিনটি বাংলা ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। যেসব জমিতে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে ভাটা, সবই একাধিক ফসলি জমি। অনুমতি ছাড়াই এসব ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তা ব্রিকসের ম্যানেজার মাইন উদ্দিন, তাহেরা ব্রিকসের মালিক শাহাদাত ও আলিফ ব্রিকসের পরিচালক মাসুদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেসব জমিতে আমরা ভাটা নির্মাণ করছি, সেগুলো এক ফসলি। পরিবেশ আইন মান্য করেই ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হবে। এরই মধ্যে বন বিভাগ, কৃষি বিভাগ, পরিবেশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছি।’

আরও