আখ থেকে দেশে ধারাবাহিক কমছে চিনি উৎপাদন

গবেষণায় সুফল মিললেও সম্প্রসারণ হয়নি সুগারবিট

আখ ও সুগারবিট—চিনি উৎপাদনের প্রধান দুই কাঁচামাল। আমাদের দেশে চিনি উৎপাদন হয় কেবল আখ থেকে। তবে কাঁচামাল সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। ফলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১৫ কলের ছয়টির কার্যক্রম। বিকল্প হিসেবে তাই ২০১১-১২ অর্থবছরে সুগারবিট চাষাবাদ প্রযুক্তি উন্নয়নে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের

আখ ও সুগারবিট—চিনি উৎপাদনের প্রধান দুই কাঁচামাল। আমাদের দেশে চিনি উৎপাদন হয় কেবল আখ থেকে। তবে কাঁচামাল সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। ফলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১৫ কলের ছয়টির কার্যক্রম। বিকল্প হিসেবে তাই ২০১১-১২ অর্থবছরে সুগারবিট চাষাবাদ প্রযুক্তি উন্নয়নে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আওতায় দেশের বেশ ক’টি চিনিকলের নিজস্ব জমিতে চাষ করা হয় অনেকটা মুলা গাছের মতো দেখতে এ ফসলটি। গবেষণায় এর সুফলও মেলে। তবে এক দশকেও এর সম্প্রসারণে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। দায়িত্বশীলরা বলছেন, চিনিকলগুলোয় সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের যন্ত্র না থাকায় এটি আর এগোয়নি। 

সুগারবিট শীতপ্রধান দেশের ফসল হলেও বর্তমানে এর উদ্ভাবিত জাতগুলো উষ্ণ অঞ্চলেও চাষ করা হয়। উৎপাদনে শীর্ষ দেশ রাশিয়া। এছাড়া ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, তুরস্ক, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, মিসর, চীন ও যুক্তরাজ্যেও প্রচুর পরিমাণে সুগারবিট চাষ করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৩০-৩৫ ভাগ চিনি সুগারবিট থেকে উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশেও এ ফসল চাষের কার্যকারিতা দেখতে ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) দেশের ১২টি সুগারমিল এবং লবণাক্ত এলাকা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে গবেষণা চালায়। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের গবেষণায় দেখা যায়, সুগারবিট এদেশের আবহাওয়ায় পাঁচ-ছয় মাসের ফসল। মূলত শীতকালে এ ফসল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন পাওয়া যায় ৭০-৮০ টন, যেখানে চিনির হার ১৪-১৮ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ‘বাংলাদেশে ট্রপিক্যাল সুগারবিট উৎপাদন ও বিস্তার’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এ সময় ট্রপিক্যাল সুগারবিটের ১৭টি জাতের তুলনামূলক উৎপাদন উপযোগিতা পরীক্ষা করা হয়। 

গবেষণায় দেখা যায়, শুভ্রা ও কাবেরী—এ দুই জাতের সুগারবিট থেকে সবচেয়ে বেশি ফলন ও চিনি উৎপাদন সম্ভব। ১২টি চিনিকলের মধ্যে কাবেরী জাত পরীক্ষামূলক চাষে হেক্টরপ্রতি ৮০ দশমিক ১৫ টন ফলন পাওয়া যায়। আর শুভ্রা হেক্টরপ্রতি ফলন পাওয়া যায় ৭৮ দশমিক ৬৭ টন। এর মধ্যে রাজশাহী চিনিকল ছাড়া বাকিগুলোয় উৎপাদিত সুগারবিটে চিনির হার মিলেছে ১৪-১৮ শতাংশের মতো। এ দুটি জাতকে তাই বিএসআরআই সুগারবিট-১ এবং বিএসআরআই সুগারবিট-২ হিসেবে অবমুক্ত করা হয়েছে। 

উৎপাদন ও বিস্তার কর্মসূচি শেষ হলে আবার আরেকটি প্রকল্পের মধ্যে চার বছরের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিএসআরআইয়ের গবেষকরা জানান, সুগারবিট মূলত শীতকালীন দেশের ফসল হলেও তুরস্ক ও মিসরসহ বিভিন্ন দেশে চিনি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশেও সুগারবিট আবহাওয়া উপযোগী। আখ ১৪ মাসের ফসল হওয়ায় তুলনামূলক সুগারবিট স্বল্পমেয়াদি। আবার আখের চেয়ে তুলনামূলক উৎপাদন বেশি। এছাড়া সুগারবিটে আখের চেয়ে বেশি চিনি সংগ্রহ করা সম্ভব। আবার এ ফসল উৎপাদনে আখের চেয়ে পানি কম লাগে, চাষপদ্ধতিও সহজ।

গবেষকরা আরো জানান, সুগারবিট থেকে চিনি ছাড়াও এর পাতা, বিটপাল্প ও মোলাসেস পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার পাতা-ডগা থেকে গ্যাস ও সার উৎপাদন সম্ভব। ফলে চিনির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পশুখাদ্য, জ্বালানি ও সারের চাহিদা মেটানোও সম্ভব এ ফসল থেকে। তবে দেশে চিনিকলগুলোয় সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় চিনি সংগ্রহ সম্ভব নয়। এ কারণে দীর্ঘদিন গবেষণা চললেও সুগারবিটের সম্প্রসারণ করা যায়নি। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া না হলে দীর্ঘদিনের গবেষণা পুরোটাই বিফলে যাবে। আবার লোকসানে থাকা চিনিকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হলেও কোনো এক অজানা কারণে বিএসএফআইসি থেকে সুগারবিট উপযোগী যন্ত্র প্রতিস্থাপনে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। 

সুগারবিট নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজস্ব উদ্যোগে চাষাবাদ করে আসছেন আবদুস ছালাম। ভিনদেশী এ ফসলটি থেকে চিনি উৎপাদনে অর্গানিক বাংলাদেশ লিমিটেডের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন নিজে সুগারবিট উৎপাদন করছি। চিনি উৎপাদনে কারখানা নির্মাণে ঋণ নেয়ার জন্য অনেক ব্যাংকে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কারো সাড়া পাইনি। তাই বিদেশী একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নিজেই কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আগামী বছরের মার্চ থেকে চিনি উৎপাদন শুরু করব। শুরুতে আমাদের কারখানাটিতে ৪২ হাজার টন চিনি, ৪২ হাজার টন পশুখাদ্য, ৪২ হাজার টন সার এবং ১ কোটি ৪৪ লাখ কিউবিক মিটার গ্যাস উৎপাদন করতে পারব।’ 

সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন খরচও অনেক কম বলে জানান আবদুস ছালাম। প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকায় বিক্রি সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চিনির বাজার অনেক বেশি অস্থিতিশীল। অথচ সুগারবিট বহুমুখীভাবে ব্যবহার করা যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন করা হয়। এটা স্বল্পমেয়াদি ফসল এবং ফলন ও চিনির হার অনেক বেশি। ফলে আখের চেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন সম্ভব। তাছাড়া একটি মিল করতে ৬০ কোটি টাকার মতো খরচ হবে। অনেকদিন আমি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো মিল প্রতিষ্ঠা বা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।’ 

বিএসআরআইয়ের গবেষণার শুরু থেকেই গবেষক হিসেবে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একেএম রাশেদুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আখ থেকে চিনি সংগ্রহের হার ১০ শতাংশ। আর সুগারবিট থেকে চিনি সংগ্রহ করা হয় ১৪ শতাংশের বেশি। আমাদের দেশে উৎপাদিত সুগারবিট গবেষণা করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ১৫ শতাংশ চিনি রয়েছে। এখন মিলগুলো কত ভাগ সংগ্রহ করতে পারবে তা যন্ত্রের ওপর নির্ভর করবে। সুগারবিট থেকে চিনি সংগ্রহ করে এর বাকি অংশ পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আবার এটি থেকে আমরা গ্যাসও উৎপাদন করেছি, যা চিনি তৈরিতে জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগবে। আবার সারও উৎপাদন সম্ভব। অর্থাৎ সুগারবিটের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। আখের পাশাপাশি চিনিকলগুলোয় সাথী ফসল হিসেবে সুগারবিট চাষ শুরু করা যেতে পারে। তাহলে দুভাবেই লাভবান হওয়া সম্ভব।’

দেশে দিন দিনই কমছে আখের উৎপাদন। মাড়াইয়ের জন্য পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাচ্ছে না সরকারি চিনিকলগুলো। ফলে সক্ষমতার ১০ ভাগ চিনিও তারা উৎপাদন করতে পারছে না। কোনো কোনো বছর তাই হাজার কোটি টাকাও লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৫টি চিনিকলের ছয়টির কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিএসএফআইসি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির হিসাবে, দেশে চিনির চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। দেশের চিনিকলে বছরে উৎপাদন সক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪৪ টন। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি চিনিকলগুলোয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৪ টন আখ থেকে কেবল ২১ হাজার ৩১৪ টন চিনি উৎপাদন হয়েছে, যা ২০০০ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ লাখ ১ হাজার ৯৮০ টন আখ থেকে ৮২ হাজার ১৪০ টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল। এর পরের অর্থবছরে ৪৮ হাজার ১৩৩ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ২৪ হাজার ৫০৯ টন চিনি। 

দেশে উৎপাদিত আখ প্রায় ১৪ মাসের ফসল। আর চিনি সংগ্রহের হার মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা কারণেই ক্রমাগত লোকসান গুনছে দেশের চিনিকলগুলো। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৩২ কোটি ৮ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯২৮ কোটি ২১ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৮ কোটি ৩৮ লাখ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ৮৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ পরিস্থিতিতে অন্তত বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকলগুলোয় সুগারবিটের মাধ্যমে অন্তত চিনি উৎপাদনের তাগিদ গবেষকদের। 

বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু যদিও সুগারবিটকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুপযোগী বলে মনে করেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সুগারবিট মূলত শীতপ্রধান দেশের ফসল। এটি আমাদের দেশে হয় না। তাছাড়া একটা মিল চালাতে হলে হাজার হাজার টন বিট লাগবে। আবার কৃষক এ ফসল গ্রহণ করবেন কিনা সেটাও তো নিশ্চিত না। আমরা বিট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছি।’ 

আরিফুর রহমান বলেন, ‘একসময় চিনি উৎপাদন থেকে শুরু করে সবকিছু আমরাই করতাম। পরবর্তী সময়ে চার-পাঁচটা কোম্পানিকে চিনি পরিশোধনের জন্য দেয়া হয়েছিল। তাদের দেয়া হয়েছিল মূলত রফতানির জন্য। কিন্তু পরে সেটা আমদানিতে চলে যায়!’ দেশের মিলগুলো অনেক পুরনো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে আখ থেকে চিনি উৎপাদনের হার ১০ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ। কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে সেটি সাড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছি। নতুন মিল ছাড়া ১০-১১ শতাংশে নেয়া সম্ভব হবে না। আমদানিকারকরা সুগারবিট ও আখ দুটির উপকরণই আনছেন চিনি তৈরির জন্য, কিন্তু আমাদের দেশের আবহাওয়া সুগারবিট উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়।’

জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রস্তুতকারী সংস্থা স্ট্যাটিস্টার ২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী, রাশিয়া ৪১ দশমিক ২ মিলিয়ন টন সুগারবিট উৎপাদন করে। এছাড়া ফ্রান্স ৩৪ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ৩৩ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন, জার্মানি ৩১ দশমিক ৯৫ টন, তুরস্ক ১৮ দশমিক ২৫ মিলিয়ন, পোল্যান্ড ১৫ দশমিক ২৭, মিসর ১৪ দশমিক ৮৩, ইউক্রেন ১০ দশমিক ৮৫, চীন ৭ দশমিক ৮৫ ও যুক্তরাজ্য সুগারবিট উৎপাদন করে ৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন টন। আমাদের দেশের আবহাওয়ায়ও এ সম্ভাবনা যে উজ্জ্বল তা গবেষণায় প্রমাণিত। 

বিএসআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আখ থেকে চিনি হয়, এর ছোবড়া জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সুগারবিট থেকে গুড় করতে জ্বালানি লাগবে তা নিয়ে সমস্যা আছে। আবার একটা মিল চালানোর জন্য যে পরিমাণ সুগারবিট লাগবে তার উৎপাদনও করা যাচ্ছে না। মিলগুলোকে সোচ্চার হতে হবে। চিনিকলগুলোয় চিনি সংগ্রহের হার অনেক কম। যন্ত্রাংশগুলো পুরনো। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ছোট ছোট প্লান্ট করে সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদন করা যেতে পারে।’ 

সুগার মিলের ভেতরে নিজস্ব যেসব জমি রয়েছে সেগুলোয় কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আখ চাষ করেন কৃষক। চিনিকল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল তারাই উৎপাদন করেন। এখন মিলগুলোর অবস্থা ভালো না থাকায় অনেকেই আখ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। তাই বিকল্প হিসেবে সুগারবিট চাষের বিষয়ে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কৃষক যে ফসলে লাভ পাবেন সেটাই চাষ করবেন। এক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসএফআইসির উদ্যোগ নিতে হবে। তবে একটি দেশ সব পণ্য উৎপাদন করবে না। আমাদের দেশে জমির স্বল্পতা রয়েছে। আবার মিলগুলোয় চিনি উৎপাদনের যে খরচ তার চেয়ে আমদানিতে খরচ কম পড়ে। এজন্য চিনি আমদানি করে। তবু সুগারবিট নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আখ থেকে তিন মাসেই চিনি উৎপাদন সম্ভব। ফলে বছরের বাকি সময় চিনিকলগুলো ব্যবহার হয় না। বাকি সময় তাই সেখানে কর্মরতদের কোনো কাজ থাকে না। এ সময় আমরা মিলগুলোয় অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে কাজ করছি।’ 

আমদানিকারকরা চিনি পরিশোধন করে বাজারে যে দামে ছাড়ে তার চেয়ে আখ থেকে চিনি উৎপাদন করতে বেশি খরচ হয় বলে চিনিকলগুলো লোকসানে আছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিকল্প ভাবছি। এ নিয়ে একটি পাইলট প্রজেক্টও হাতে নিয়েছি। সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের বিষয়টি আমাদের সামনে রয়েছে। তবে কলগুলোয় কেবল আখ থেকে চিনি উৎপাদনের যন্ত্র রয়েছে। আবার এগুলো অনেক পুরনো। সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনে তাই পুরো কল পরিবর্তন করতে হবে। সেক্ষেত্রে নতুন মেশিন আনা হবে। চিনি তৈরির যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলোও করতে হবে। আবার সুগারবিট যেহেতু শীতকালীন ফসল, সারা বছর সংরক্ষণে কোল্ড স্টোরেজ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, তারা ভালো জাত ডেভেলপ করে আমাদের দেবে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব। অর্থাৎ একটা পাইলট প্রজেক্ট, যেখানে চিনি পরিশোধনের ব্যবস্থাও রাখা হবে। আবার ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালকোহলও উৎপাদন করা যাবে।’ 

আরও