চট্টগ্রামের
মিরসরাইয়ে জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত ১৮৭ জন জলাতঙ্ক আক্রান্ত
হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩৭ জন আক্রান্ত হয়েছে
কুকুরের কামড়ে। ৫০ জন অন্যান্য
প্রাণীর কামড়ে। চলতি বছর মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ২০০টি জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তবে তিন মাসে তা শেষ হয়ে
গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে জলাতঙ্ক আক্রান্ত গরিব রোগীরা। উচ্চমূল্যে ফার্মেসি থেকে কিনে ভ্যাকসিন দিতে হচ্ছে তাদের।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত ১৮৭ জনের মধ্যে ১০৫ পুরুষ ও ৮২ জন নারী। জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছে আটজন। তাদের মধ্যে পাঁচ পুরুষ ও নারী তিনজন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ জন। তাদের মধ্যে সাত পুরুষ এবং নারী আটজন। মার্চে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৪ ও নারী ১২ জন। এপ্রিলে ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ পুরুষ ও তিনজন নারী। মে মাসে আক্রান্ত হয়েছে সাতজন। তাদের মধ্যে পাঁচ নারী ও দুজন পুরুষ। জুনে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ আট ও নারী সাতজন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ৪২ জনের মধ্যে ২২ পুরুষ ও ২০ নারী। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে আগস্টে। এ মাসে ৪৬ নারী ও পুরুষ কুকুর এবং বিভিন্ন প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে ১৯ পুরুষ ও ২৭ জন নারী।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলতি বছরের জুনে ২০০ ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেয়া হয়। মাত্র তিন মাসে সব ভ্যাকসিন শেষ। ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে জুলাইয়ে এআরভি (ভায়াল) প্রথম ডোজ দেয়া হয় ৪২ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় ৪১ জনকে। ৩৮ জনকে দেয়া হয় তৃতীয় ডোজ। আগস্টে ৩৩ জনকে দেয়া হয় প্রথম ডোজ। ২২ জনকে দেয়া হয় দ্বিতীয় ডোজ। তৃতীয় ডোজ দেয়া হয় ১৮ জনকে। এছাড়া ছয়জন জলাতঙ্ক রোগীকে দেয়া হয় ভ্যাকসিন। আর এতেই শেষ হয়ে যায় বরাদ্দকৃত ২০০ ভ্যাকসিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার মো. রাশেদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিয়মিত পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের অধীনে যখন যা বরাদ্দ দেয়া হয়, তা দিয়ে কাজ করতে হয়। তবে প্রত্যেক বছর সমান বরাদ্দ দেয়া হয় না। চলতি বছরের জুনে ২০০টি ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সব ভ্যাকসিন শেষ হয়ে গেছে।’
স্থানীয়রা জানায়, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে রোগীরা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়। এতে গরিব রোগীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকে দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনে ব্যবহার করছে।
উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলাতঙ্ক রোগীদের চারটি ভ্যাকসিন দেয়া হয়। তবে আক্রান্ত স্থানের গভীরতার কথা চিন্তা করে অনেক সময় চিকিৎসক পাঁচটি ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ দেন। এগুলো হলো আক্রান্তের দিন একটি, তৃতীয় দিন একটি, সপ্তম দিন একটি, এক বছরের সময় একটি ও শেষটি দেড় বছরের সময়। ফার্মেসিগুলোয় প্রতিটি ভ্যাকসিন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকা। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা।
ভ্যাকসিন সংকটের বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিনের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।