বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি
চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করে রাজশাহী থানা পুলিশ।
এরপর বিকাল ৪টা থেকে দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত থানায় অবস্থান করে তিন শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে
নিয়ে আসেন শিক্ষকরা।
গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) রাত ১টায় রাজশাহীর মতিহার থানায় এ ঘটনা ঘটে। বিশজন
শিক্ষক প্রায় ৯ ঘণ্টা চেষ্টার পর আটকদের পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হন।
থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি
বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ সামিউল বাসিত ও মাজেদ হাসান এবং শিক্ষা ও
গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার সন্দেহে দুপুরের
দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সামনে থেকে বাসিত ও মাজেদ এবং
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে নাইমকে আটক করে পুলিশ। খবর জানাজানি
হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা একযোগে থানায় উপস্থিত হয়ে
আটককৃত শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনেন।
এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোবারক পারভেজ বণিক
বার্তাকে বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়ি ভাংচুরসহ নানা বিচ্ছিন্ন
ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের
জন্য থানায় আনে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল
মামুন জানান, সেই বিকাল ৪টা থেকে রাত ১টায় আমরা তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ফিরলাম।
রাবি প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ধন্যবাদ তাদের প্রাপ্য। ন্যায্যতার সংগ্রাম
চলবে।
তবে আটককৃত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন এখনো ছাড়া পাননি। তাদের ছাড়াতেও শিক্ষকরা বিকেলে থানায় উপস্থিত হন। তবে আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের ছাড়া হয়নি।
এ ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বণিক
বার্তাকে বলেন, তিনি ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছেন। তিনি কথা বলেছেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
তারা বলেছেন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেবেন।
উল্লেখ্য, থানায় অবস্থানকৃত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রোবাইদা আখতার, ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিব জাকারিয়াসহ অন্তত ২০ শিক্ষক।
এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোবারক পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়ি ভাংচুরসহ নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় ব্যাগ নিয়ে সন্দেহভাজন অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখে এ ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারে মর্মে যথেষ্ট সন্দেহ হওয়ায় তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, আমরা তিনজন শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনতো সক্ষম হয়েছি। আরেক থানায় কথা বলেছি, যদি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ হয় তাহলে তাদেরকে যেন ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তারা খোঁজখবর রাখছেন। শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে থানায় শিক্ষকেরা অবস্থান করছেন এ সময় বাকিদের মুক্ত করতে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটায় রাজশাহীর আদালত চত্বরে পুলিশের
সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ
রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়া
হয় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ওই এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ১৮
জনকে আটক করেছে।
এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে নগরীর দুই থানা-পুলিশ। এরমধ্যে তিনজন
এখনো ছাড়া পাননি। নগরীর মহিষবাথান এলাকা থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী
রিফাত হাসান এবং আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয়কে আটক করা হয়। তাদের
মধ্যে প্রত্যয়কে রাজপাড়া থানা পুলিশ ও রিফাত হাসানকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে।
তাদের ছাড়াতেও শিক্ষকরা বিকালে থানায় উপস্থিত হন।