রাঙ্গামাটি হাসপাতালে রোগী বাড়লেও শয্যা কম

বিগত দিনের চেয়ে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। সে অনুপাতে হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা কম।

বিগত দিনের চেয়ে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। সে অনুপাতে হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা কম। ১০০ শয্যার হাসপাতালে মাঝেমধ্যে রোগী ভর্তি থাকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। কোনো কোনো সময় করিডোরেও গাদাগাদি করে থাকতে হয় ভর্তি রোগীদের। আগের তুলনায় হাসপাতালে সেবাপ্রাত্যাশী ও ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ায় নিয়মিত হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটি ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ১০ তলা ভবন নির্মাণ শেষ হলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকার প্রান্তিক মানুষের মধ্যে হাসপাতাল ভীতি দূর হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও বেড়েছে। এ কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ আগের তুলনায় বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও রোগী আগের তুলনায় বাড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক মানুষ আগে স্থানীয় বৈদ্য, ওঝা ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী থাকলেও এখন সাক্ষরতা বাড়ায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকছে।

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অফিশিয়ালি ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে রোগী থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। গত মাসেও সর্বোচ্চ ২৩২ পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন। সাধারণত ১৮০-১৯০ রোগী থাকেন। আবার ১৬৫ পর্যন্তও রোগীর সংখ্যা নেমেছিল। সব মিলিয়ে শয্যা সংখ্যার চেয়ে বাড়তি রোগী থাকে নিয়মিত। ১৫০ শয্যার নির্মাণাধীন নতুন হাসপাতাল ভবনটির অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে শয্যা সংখ্যা অনেকটাই কেটে যাবে।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ২ লাখ ১৯ হাজার ৯২০ রোগী জরুরি, আন্তঃবিভাগ (ভর্তি), বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০১৭ সালে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ জন, ২০১৮ সালে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯১০, ২০১৯ সালে ২ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৬, ২০২০ সালে ২ লাখ ২৭ হাজার ৬২১, ২০২১ সালে ২ লাখ ৮০ হাজার ৪০০, ২০২২ সালে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৯ এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ৭০৬ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) কার্যালয়ের বার্ষিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তবে রোগী বাড়ার পেছনে সরকারের প্রচেষ্টা, হাসপাতালে ডাক্তার, নার্সদের আন্তরিকতার কারণে রোগীর চাপ বাড়ছে।

হাসপাতালে সেবাপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ‘সরকার হাসপাতালের সেবা বাড়ানোর জন্য অফুরন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ, ডাক্তার, লজিস্টিক সাপোর্টসহ বিভিন্নভাবে সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ডাক্তার, নার্স, স্টাফদের আন্তরিকতার কারণে রোগী সংখ্যা বেড়েছে।’

পাহাড়ের চিকিৎসাসেবা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীর খিয়াং বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ হওয়ায় রাঙ্গামাটিতে আগের চেয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েছে। এতে মানুষ জেলা শহরের হাসপাতালেই আগের চেয়ে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন। সরকারি কার্যক্রম ছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। একজন প্রসূতিকে গর্ভাবস্থায় তিনবার চেকআপের প্রয়োজন থাকলেও আগে অনেকেই হাসপাতালে আসতেন না; এখন একবার হলেও আসেন। সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই চিকিৎসাসেবার মান বাড়ায় সেবাগ্রহীতা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি ছাড়া চিকিৎসার জন্য রোগীদের জেলার বাইরে যেতে হচ্ছে না।’

আরও