দীর্ঘ চার মাস সাতদিন পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হতে যাচ্ছে। আজ মধ্যরাত থেকে হ্রদে মাছ আহরণ শুরু করবেন জেলেরা। ২৫ এপ্রিল হ্রদে তিন মাসের জন্য মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও পানিস্বল্পতার কারণে দুই দফায় নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো হয়েছিল আরো এক মাস সাতদিন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীকাল ভোর থেকেই রাঙ্গামাটির প্রধান বিপণন কেন্দ্র ছাড়াও কাপ্তাই, মারিশ্যা এবং খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ির উপকেন্দ্রে কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। এরপর এসব মাছের শুল্কহার আদায় শেষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হবে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) হিসাবে, ২০২০-২১ মৌসুমে ৬ হাজার ৭৯৪ টন, ২০২১-২২ মৌসুমে ৬ হাজার ৫২৩, ২০২২-২৩ মৌসুমে হাজার ৫ হাজার ৪৯০ এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৭ হাজার ৬২৭ টন মাছ বাজারজাত হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাছ বাজারজাতের পরিমাণ বাড়ার আশা করছেন বিপণন কর্মকর্তারা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে বিএফডিসির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। কিছু কাজ বাকি রয়েছে, তবে সেটা আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান বিপণন কেন্দ্রসহ অন্যান্য কেন্দ্র আগেই প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামীকাল ভোর থেকে মাছ নিয়ে আসবেন জেলেরা। এরপর মাছের শুল্কহার আদায় শেষে বাজারজাত করবেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর ৮ হাজার ২০০ টন মাছ বাজারজাত এবং ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর কাপ্তাই হ্রদের মাছ বাজারজাত হয়েছিল ৭ হাজার ৮০০ টনের মতো। এ বছর হ্রদে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। মাছ আহরণ ২০-২৫ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছি।’
রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেন, ‘আজ মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরু হতে যাচ্ছে। চার মাসের বেশির সময় পর কাজে ফিরছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। সবার মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, এ বছর হ্রদের মাছের গুণগত মান ভালো হবে। কারণ গত বছরও দেরিতে মাছ ধরা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে বৃষ্টি হয়েছে এক সঙ্গেই। কিন্তু এবার কয়েকদিন পরপর বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে পোনা মাছগুলো বাড়ার সময় পেয়েছে। তাই এ বছর মাছের আকারও ভালো হবে।’
প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এ সময় হ্রদের মাছ বাজারজাতসহ স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ রাখা হয়। তবে চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও হ্রদে পানি পর্যাপ্ত না বাড়ার ফলে প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ করে এক মাস ৩৮ দিন নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিন মাসের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞার পরপরই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু করা যাচ্ছে। গত বছরও কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের ১২ দিন আগেই বন্ধ করা হয় মাছ আহরণ। আবার তিন মাসের নির্ধারিত সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় দুই দফায় আরো এক মাস ১২ দিন বন্ধের সময় বর্ধিত করা হয়। চার মাস ১২ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের মাছ আহরণ শুরু হয়। এবারো দুই দফায় এক মাস সাতদিন সময় বর্ধিত করে ১ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হচ্ছে মাছ আহরণ।
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, রাজস্থলী ও কাউখালী ছাড়া বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং মহালছড়ি উপজেলা মিলে সাড়ে ২৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। যদিও তালিকার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।