উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণে দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশী প্রবাসীরা জাতিসংঘের মাধ্যমে যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে, তা দিয়ে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের দাবি ওঠে ১৯৯৭ সালে। ২০০০ সালে তাদের দাবি মেনেও নেয় সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় একাধিকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় ২৩ বছরেও প্রত্যাশিত চিকিৎসা কেন্দ্র পাননি প্রবাসীরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালের নাম চূড়ান্ত না হওয়ায় কাজের অগ্রগতি থেমে আছে।
উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলে ১৯৯০ সালে প্রায় ৭২ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ক্ষতিপূরণ দেয় ইউনাইটেড নেশন্স কমপেনশেসন কমিশন (ইউএনসিসি)। ক্ষতিপূরণের অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা হয়। এতে সুদ বাবদ আসে ১৮ কোটি টাকা। ওই সময় ইরাক ও কুয়েত ফেরত প্রবাসীরা এ টাকা দিয়ে জমি কিনে কিডনি হাসপাতাল ও আইটি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। ২০০০ সালে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিজিল্যান্স টিমের সভা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে তাদের প্রস্তাব পাস হয়। এরপর ১৮ কোটি টাকায় রাজধানীর গুলশান থানার ভাটার মৌজায় কেনা হয় ১৫১ দশমিক ৫৪ কাঠা জমি। জমি রেজিস্ট্রি করা হয় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নামে।
উপসাগরীয় যুদ্ধে ফেরত প্রবাসীদের সংগঠন ‘ইরাক-কুয়েত প্রত্যাগত বাংলাদেশী কল্যাণ সমিতি’ প্রতিনিয়ত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চিঠি চালাচালিসহ নানাভাবে যোগাযোগ করছে। কিন্তু চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি কখনই গতি পায়নি।
প্রবাসীরা জানান, ২০০৪ সালে কিডনি হাসপাতাল ও আইটি সেন্টার নির্মাণের প্রকল্পটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বাতিল হয়ে যায়। এর পরিবর্তে সেখানে ৫০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন পায়। তবে প্রবাসীরা আন্দোলনে নামলে সে প্রকল্পও বাতিল হয়ে যায়।
এরপর ২০২০ সালে প্রবাস ফেরত ও বিদেশগামী কর্মীদের জন্য আধুনিক একটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর ২০২২ সালে হয় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর কনসাল্টিং ফার্ম জানায়, সেখানে ৩০০ শয্যার দুটি ১৫ তলা হাসপাতাল ভবন, ১০ তলা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং দুটি আটতলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা যাবে এবং এ বিনিয়োগ হবে ঝুঁকিমুক্ত।
বিএমইটি মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যখন প্রবাসীদের জমি ক্রয় করা হয় তখন বিএমইটির একটি শাখা ছিল ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। যে কারণে তখন বিএমইটির নামে জমি ক্রয় করা হয়। এখন যেহেতু কল্যাণ বোর্ড আলাদা হয়েছে তাই জমির মালিকানা কল্যাণ বোর্ডকে হস্তান্তর করা হবে। গত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, আধুনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপিত হলে প্রবাস ফেরত, বিদেশগামী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ৫০ শতাংশ ছাড়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’-এর নামে করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন চাওয়া হয়। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি। পরে নামকরণের বিষয়ে নির্দেশনার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক শোয়েব আহমেদ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নামের জন্য কাজটি আর এগোয়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।’
‘ইরাক-কুয়েত প্রত্যাগত বাংলাদেশী কল্যাণ সমিতি’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দুই দশকের বেশি সময়েও আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। গত ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত দাবি উপস্থাপন করেছি।’