খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের ২৫ কিলোমিটার অংশে ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। পিচ, পাথর ও সুড়কি উঠে চলাচল অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের জুনে সড়কটি সংস্কারে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে দুই দফা মেয়াদ শেষ হলেও সড়ক সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি। সড়ক ও জনপথ সওজ বিভাগও কাজের গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। জেলা শহর থেকে পানছড়ি উপজেলার সড়কটি পুরোটাই সমতল। সময় বাঁচাতে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ও তবলছড়ি ইউনিয়নের মানুষ এ সড়কে চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ প্রতিদিন হাজার খানেক গাড়ি চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। তবে সড়কে অসংখ্য গর্ত রয়েছে। বেশির ভাগ অংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ইট ও পিচের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কয়েকটি স্থানে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে ভাড়ায় চালিত সিএনজিচালক মো. আব্দুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ সড়কে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছি। দ্বিগুণ ভাড়া হলেও সিএনজি নিয়ে আসি না। এতে অনেকের সঙ্গে তর্কবিতর্কের ঘটনাও ঘটে। মূলত সড়ক দিয়ে একবার আসা-যাওয়া করতেই একদিকে যেমন অতিরিক্ত সময় লাগে, তেমনি গাড়ি চালানোও দুষ্কর। তাই কয়েক মাস ধরে এ সড়কে গাড়ি চালাচ্ছি না।’
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কটি সংস্কারে ২০২৩ সালে দরপত্র আহ্বান করে সওজ বিভাগ। ১৩ কোটি ৩৫ লাখ ব্যয়ে কাজটি পায় আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে বাস্তবায়ন করছেন এমদাদ পাটওয়ারী নামে এক সহযোগী ঠিকাদার। গত বছরের জুনে কার্যাদেশ পেয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ হয়নি। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে চলতি মার্চ পর্যন্ত করে সওজ বিভাগ। তাতেও দৃশ্যত অগ্রগতি হয়নি। ২ মার্চ দ্বিতীয় দফায় কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাতেও সড়কের কাজ এগোয়নি। বরং নতুন করে সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশনের পক্ষ থেকে।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর দ্বিতীয় দফায় সময় চাইলে ঠিকাদারকে তা দেয়া হয়েছে। তার পরও ঠিকাদারের কাজের গতি বাড়েনি। কাজের ধীরগতির জন্য ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করতে না পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত কয়েক বছরে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কটি একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তা কয়েক মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। বরং এক-দুই বছরের মধ্যেই সড়কটি পুনরায় সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে।
পানছড়ি উপজেলার ব্যবসায়ী বিজয় কুমার দেব জানান, খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার সড়ক ভাঙা। ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন থাকায় সড়কে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাসের পর মাস এ অবস্থার কারণে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পড়েছে বিপাকে।
এলাকাবাসী জানান, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীকে। এছাড়া সড়কের পাশে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে বসে থাকাও যায় না ধুলাবালির কারণে। ধুলায় যেমন ঘরবাড়ির জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে, তেমনি শ্বাসজনিত রোগে ভুগতে হচ্ছে।