খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০-৩১ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে সে অনুপাতে বাড়েনি অবকাঠামো। বর্ধিত শয্যার জন্য সম্প্রসারিত ভবন প্রয়োজন হলেও তা নির্মাণ করা হয়নি। কাগজে-কলমে ৩১ শয্যার অনুমোদন থাকলেও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ হয়নি। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। বছরের পর বছর এ অবস্থা চলতে থাকলেও সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রোগীদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে জনবহুল উপজেলা মাটিরাঙ্গা। একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় দুই লাখেরও বেশি মানুষের বাস। যাদের একমাত্র চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা সদর থেকে ৪০-৪৫ কিলোমিটার দূরের তাইন্দং তবলছড়ির রোগীরাও আসেন চিকিৎসা নিতে। অথচ ১০ শয্যা হাসপাতালের ভবন, জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে চিসিৎসাসেবা। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় পাশাপাশি দুটি কক্ষে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে ধারণক্ষমতার অধিক রোগী ভর্তি থাকেন প্রতিদিন। নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা শয্যা না পেয়ে ফ্লোরে ও বারান্দায় থাকছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ১০ শয্যা দিয়ে যাত্রা শুরু করে মাটিরাঙ্গ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এরপর আর অবস্থার উন্নতি হয়নি। পরবর্তী সময়ে ৩১ শয্যার অনুমোদন মিললেও সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ হয়নি। মেলেনি চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর লোকবল। নেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ১০ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল থাকার কথা এখানে তাও নেই। ৩১ শয্যায় উন্নীত হলেও পুরনো জনবল দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা। আবার যারা কর্মরত আছেন তাদের অনেকেই সংযুক্তিতে থাকেন।
উপজেলার বড়নাল ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ জানান, হাসপাতালটিতে সেবা দেয়ার মতো তেমন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সম্প্রসারিত ভবন ও জনবল নিয়োগ করা প্রয়োজন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরি বিভাগে গড়ে ৫০ জন ছাড়াও ৩০-৩৫ জন বহির্বিভাগে ভর্তি থাকেন। তাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে যে পরিমাণ জনবল ও ভবন দরকার তা নেই এখানে। হাসপাতালটিতে চারজন জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ ১৮টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে ১৩ জন। আবার তাদের মধ্যে ছয়জন চিকিৎসক বিভিন্ন স্থানে সংযুক্তিতে রয়েছেন। এছাড়া সিনিয়র নার্সের ২০টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে পাঁচজন। চারজন মিডওয়াইফের থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন।
সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ আবুল হাসনাত জানান, প্রশাসনিকভাবে ৩১ শয্যার অনুমোদন পেলেও দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে ১০ শয্যার জনবল দিয়ে। যে সংখ্যক জনবল রয়েছে তাতেও টানাপড়েন থাকায় চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, নতুন ভবন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই অনুমোদন মিললে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।’