পাহাড়ে আগর বাগান বাড়লেও বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব

আগর গাছের নির্যাস থেকে তৈরি করা হয় আতর বা সুগন্ধি। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক দুই উপায়েই আগর থেকে সুগন্ধি উৎপাদন করা হয়।

আগর গাছের নির্যাস থেকে তৈরি করা হয় আতর বা সুগন্ধি। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক দুই উপায়েই আগর থেকে সুগন্ধি উৎপাদন করা হয়। দেড় দশকে রাঙ্গামাটিতে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে শত শত আগর বাগান। ছোট পরিসরে তৈরি হয়েছে প্রক্রিয়াকরণ কারখানাও। তবে বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিসর বাড়ছে না দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময়ী এ শিল্পটির। রয়েছে পুঁজি সংকটও।

মূলত বাঘাইছড়ি উপজেলা ঘিরেই পাহাড়ে আগর-আতর শিল্পের সম্ভাবনা বেড়েছে। কাপ্তাই উপজেলায় বন বিভাগের উদ্যোগে কিছু আগর বাগান সৃজিত হলেও বাণিজ্যিকভাবে বাগান শুরু করেছেন বাঘাইছড়ির বাগানিরা। ব্যবসা পরিচালনা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণে আগর বাগানিরা ‘বাঘাইছড়ি উপজেলা আগর ব্যবসায়ী সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন।

ব্যবসায়ী সমিতির হিসেবে বর্তমানে বাঘাইছড়ি উপজেলাজুড়ে ছয় কোটির অধিক আগর গাছ রয়েছে। বাগান রয়েছে কয়েক হাজার। বছরে গড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ হাজার আগর গাছ। স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াকরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৩টি চুল্লি বা চুলা। মূলত ২০১০ সালে বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের আর্য্যপুর বিহারে ৩০০টি আগর গাছ ৫৬ লাখ টাকায় বিক্রির পর থেকে বাগান সৃজনে আগ্রহ বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

এ প্রসঙ্গে বাঘাইছড়ি উপজেলা আগর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সন্তোষ প্রিয় চাকমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০২২ সালে আমাদের করা এক জরিপ অনুযায়ী বাঘাইছড়িতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ছয় কোটির অধিক আগর গাছ রয়েছে। প্রতি বছরে এখানে ২০-২৫ হাজার আগর গাছ বিক্রি হয় এবং পাঁচ লাখের অধিক গাছ রোপণ করা হচ্ছে। ২০১০ সালে আমি ৩০০টি আগর গাছ ৫৬ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলাম। এরপর থেকে উপজেলায় ক্রমান্বয়ে আগর বাগান বাড়ছে। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা আগরের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। বলতে গেলে প্রতিটি ঘরেই আগর বাগান সৃজন করা হচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী জ্ঞানেন্দু চাকমা বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৯৮৪ সাল থেকে আগর বাগান করা হচ্ছে। তবে ২০০০ সাল থেকে উপজেলায় বাগান সৃজনের প্রচলন বেড়েছে। আমার তিনটি বাগানে ১২ হাজারের অধিক গাছ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বাগানের গাছ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। ২০২২ সালে আমি ৬২টি আগর গাছ ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। চট্টগ্রাম থেকে মো. হানিফ নামে এক ব্যবসায়ী গাছগুলো কিনে নেন। বাঘাইছড়িতে এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগর গাছ কিনতে ব্যবসায়ীরা আসছেন। মূলত আগর গাছের প্রক্রিয়াকরণ আমরা বাড়িতেই করছি। বাঘাইছড়িতে তিন ব্যবসায়ী ১৩টি চুলা দিয়ে আগর-আতর উৎপাদন করছেন।’

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় যৌথভাবে আগর বাগান গড়ে তোলেন কবির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন। জেলা শহরের আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়কের দুই পাশেই গড়ে তোলা হয় আগর বাগান। জানতে চাইলে কবির হোসেন বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় আমরা আগর বাগান গড়ে তুলেছি। বন বিভাগের জমিতে চারা রোপণসহ পরিচর্যার পেছনে আমাদের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সাধারণত ১৫ বছরের মধ্যে গাছ থেকে আগর তেল সংগ্রহ করা হয়। এখন আগর গাছে পেরেক মারার সময় হয়েছে। পেরেক মারার পর ছত্রাক জন্মাবে, এরপর আগর তেল উৎপাদন করা হবে।’

তবে শিল্পটি সম্ভাবনাময় হলেও পুঁজি ও বাজার ব্যবস্থানার সংকটে খুব বেশি অগ্রসর হতে পারছে না। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং উপবন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাহাড়ে এখনো আগর বাগানের বাজার ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। মূলত ২০০১-০৬ পর্যন্ত বন বিভাগের একটা প্রকল্প ছিল আগর বনায়ন নিয়ে। তখন বন বিভাগের উদ্যোগেই পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আগর বাগান সৃজন শুরু হয়েছিল। তখন পাহাড়ের মানুষ আগর গাছ সৃজনে উৎসাহী হন। এখন ব্যক্তি পর্যায়েও রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি-কাপ্তাইসহ বিভিন্ন এলাকায় আগর বাগান করা হচ্ছে। আগর একটি লাভজনক ব্যবসা। বাঘাইছড়িতে কারখানাও গড়ে তোলা হচ্ছে।’

রাঙ্গামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শাওন ফরিদ বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে এখন ব্যাপক হারে আগর বাগান গড়ে উঠছে। বিশেষ করে বাঘাইছড়ি, মারিশ্যা ও লংগদুতে আগর বাগান করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে আগর একটি সম্ভাবনাময়ী খাত।’

আরও