গ্রেডিং পদ্ধতি বদলাতে হবে সাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে

স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি ও বেসরকারি—দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বছর কয়েক আগে সমন্বিত গ্রেডিং পদ্ধতি প্রণয়ন করে তা অনুসরণের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শীর্ষস্থানীয় সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদিও শিক্ষার্থী মূল্যায়নে কমিশন প্রণীত এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে না। নির্দেশনা অমান্যকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাই আগামী ১

স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি বেসরকারিদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বছর কয়েক আগে সমন্বিত গ্রেডিং পদ্ধতি প্রণয়ন করে তা অনুসরণের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) শীর্ষস্থানীয় সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদিও শিক্ষার্থী মূল্যায়নে কমিশন প্রণীত পদ্ধতি অনুসরণ করছে না। নির্দেশনা অমান্যকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাই আগামী জানুয়ারি থেকে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে ইউজিসি। অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছে উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ না করা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ); ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ; ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি; আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ; ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি; ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়ে সম্প্রতি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজিস্ট্রারদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি।

কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও কমিশন প্রণীত অভিন্ন গ্রেডিং নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসরণ করা হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা, কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ২৪() এবং ৩৫() ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রোগ্রাম কোর্স অনুমোদনের অন্যতম শর্ত হলো কমিশন অনুমোদিত অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি যথাযথ অনুসরণ, কিন্তু সেই নীতিমালা অনুসরণ না করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ কমিশনের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য সৃষ্টির শামিল। অবস্থায় আগামী জানুয়ারি থেকে অভিন্ন গ্রেডিং নীতিমালা অনুসরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে চিঠিতে।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক . বিশ্বজিৎ চন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন একই গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়এজন্য ইউনিফর্ম গ্রেডিং সিস্টেম প্রণয়ন করে দেয় কমিশন। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করছে। যদিও কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তাদের মতো করে গ্রেডিং দিচ্ছে। একদিকে তারা আইন অমান্য করছে, অন্যদিকে উচ্চশিক্ষায় তা এক ধরনের বিশৃঙ্খলার শামিল। এজন্য আগামী জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোকে কমিশন প্রণীত অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

ইউজিসির ওয়েবসাইটে দেয়া ইউনিফর্ম গ্রেডিং সিস্টেম অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে + (প্লাস) গ্রেড বা পয়েন্ট দেয়া হবে। ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশের কম হলে দেয়া হবে গ্রেড বা দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশের কম হলে - (মাইনাস) গ্রেড বা দশমিক পয়েন্ট দেয়া হবে। একইভাবে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের কম নম্বর পেলে বি+(প্লাস) গ্রেড বা দশমিক ২৫ পয়েন্ট, ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশের কম হলে বি গ্রেড বা পয়েন্ট ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশের কম হলে বি- (মাইনাস) গ্রেড বা দশমিক ৭৫ পয়েন্ট দেয়া হবে। এছাড়া ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ নম্বর পেলে সি+ (প্লাস) বা দশমিক পয়েন্ট, ৪৫ থেকে ৫০ নম্বরের কম হলে সি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের কম নম্বর হলে ডি গ্রেড বা পয়েন্ট দেয়া হবে। আর ৪০ শতাংশের কম নম্বর পেলে এফ গ্রেড, যা অনুত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইউজিসির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউল্যাব রেজিস্ট্রার লে. . (অব.) মো. ফয়জুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, উন্নত বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্বতন্ত্র গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ইউল্যাবেও সিন্ডিকেট অনুমোদিত একটি পদ্ধতিতে গ্রেডিং করা হচ্ছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ইউজিসি থেকে বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে জানুয়ারি থেকে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। চিঠির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

একই ধরনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . আতিকুল ইসলামও। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপীই উচ্চশিক্ষা বৈচিত্র্যময়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আরেকটির গ্রেডিংয়ের কোনো মিল নেই। সবাই নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী মূল্যায়নের মানদণ্ড ঠিক করে নেয়। হার্ভার্ডের সঙ্গে কেমব্রিজ কিংবা অক্সফোর্ডের কোনো মিল পাওয়া যাবে না। এমনকি একটি দেশের মধ্যেই নানা ধরনের গ্রেডিং অনুসরণ করা হচ্ছে। এখন কমিশন যেহেতু চাচ্ছে আমরা সে আলোকেই গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করব। তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এর মাধ্যমে তো শিক্ষার মানে কোনো পরিবর্তন আসবে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস আর পেছনের সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাস নম্বর এক করা হলে তো মান এক হয়ে যাবে না। কারণ সিলেবাস, শিক্ষক, প্রশ্নপত্র পরীক্ষাসবই তো ভিন্ন।

আরও