১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফারাক্কা ব্যারাজ উদ্বোধন করে ভারত। এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রীরও। তখন পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। তবে সরকারের সিদ্ধান্তেই ওই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত অংশগ্রহণ করেননি। এর মূল কারণ ছিল ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষ। বাংলাদেশের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির আগেই ব্যারাজটি চালু করে দেয় ভারত, যা ওই সময় দেশে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এরপর পার হয়েছে প্রায় ৪৯ বছর। এখনো বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে চাপে ফেলার বড় এক ক্ষেত্র হয়ে আছে ফারাক্কা ব্যারাজ তথা গঙ্গার পানি বণ্টন।
ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এ ভূখণ্ডে অসন্তোষের ইতিহাস প্রায় ৭৫ বছরের। ১৯৫১ সালে ভারত যখন গঙ্গা নদীতে ব্যারাজটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে, তখনই এ নিয়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে অসন্তোষ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তিও তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে দু্ই সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এরপর থেকে গত পাঁচ দশক বাংলাদেশ ও ভারত—দুই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি আলোচিত বিষয় হয়ে আছে ফারাক্কা ব্যারাজ।
বিশেষত বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা আদায় করে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে কার্যত ব্যারাজটি নিয়ে অসন্তোষ এখনো রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর দেশে ভারতবিরোধী মনোভাব প্রকট হয়ে ওঠার অন্যতম বড় কারণ ছিল ফারাক্কা ব্যারাজ। এমনকি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব ক্ষোভ কারণ হিসেবে কাজ করেছে, তার অন্যতম হলো গঙ্গার পানি আদায়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যর্থতা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। এরপর এর নবায়ন নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার পানি রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রামিজ মোহাম্মদ ভাট। তিনি তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন, চূড়ান্ত চুক্তির আগেই ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করে দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে ভারতের প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব তৈরি করে। এর জেরে ওই সময়ে যারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধী দলে ছিলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকেও জটিলভাবে দেখতে শুরু করেন। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির বাস্তবায়নও হুমকির মুখে পড়ে যায়। একই সঙ্গে ভারতের কাছ থেকে গঙ্গার পানি আদায়ে বঙ্গবন্ধুর ব্যর্থতা তার প্রতি বিরোধীদের ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দেয়, যা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডেও প্রভাব রেখেছিল।
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফারাক্কা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই একটা দ্বন্দ্ব চলছিল, যা পরবর্তী সময়ে আরো প্রকট হয় এবং ভারতবিদ্বেষী মনোভাব গড়ে ওঠে। বিগত কয়েক দশকে সীমান্ত হত্যা, বাংলাদেশের নির্বাচনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে ভারতের ভূমিকা ভারতের প্রতি জনগণের নেতিবাচক ধারণা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে তারা শুধু নিজের স্বার্থই বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কার্যত তারা কোনো ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি বণ্টনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়। বাংলাদেশ-ভারতের তৎকালীন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জেরে সবার প্রত্যাশা ছিল শিগগিরই দু্ই দেশ একটি গ্রহণযোগ্য পানি বণ্টন চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে। তবে সে প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটেনি। ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হিসেবে কংগ্রেসের পরিচিতি থাকলেও গঙ্গার পানি বণ্টনে দলটির ভূমিকা ছিল অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
স্বাধীনতার পর থেকে ফারাক্কা বাঁধে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মিলিয়ে মোট পাঁচটি চুক্তি হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নিয়ে প্রথম গোলটেবিল বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দুই দেশে পানি বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরই ফারাক্কা চালু হবে। এরপর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দুই দেশের বেশ কয়েকটি বৈঠক হলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধের জেরে পানি বণ্টনের বিষয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে ভারতকে ২ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪০ দিনের জন্য পানি উত্তোলনের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারত প্রতি ১০ দিনে গঙ্গা থেকে ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার কিউসেক পানি উত্তোলন করবে এবং অবশিষ্ট ৩৯ হাজার থেকে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার আগেই ব্যারাজ পুরোপুরি চালু করে ভারত এবং ৪০ দিনের চুক্তি শেষ হওয়ার পরও গঙ্গা থেকে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে। এমনকি পানি উত্তোলনের পরিমাণও আগের তুলনায় বাড়ানো হয়।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জেরে ওই সময়ে সরকারি পর্যায়ে আর কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যার দাবিতে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার এ আহ্বান সারা দেশে আলোড়ন তৈরি করে এবং ৯০ বছর বয়সে তিনি ওই লং মার্চের নেতৃত্ব দেন। এর পরই বিষয়টি আবারো গুরুত্ব পেতে শুরু করে। জিয়াউর রহমান জাতিসংঘের ৩১তম অধিবেশনে ফারাক্কার বিষয়টি উত্থাপন করেন। জাতিসংঘ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেয়। ১৯৭৭ সালে মোরাজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে ভারতে নন-কংগ্রেস সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হয় এবং গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে পাঁচ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশকে শুষ্ক মৌসুমে আগের প্রবাহ বিবেচনায় অন্তত ৮০ শতাংশ পানির নিশ্চয়তা দেয়া হয়। তবে এ চুক্তির বিরোধিতা করে কংগ্রেস। এমনকি দলটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তারা ক্ষমতায় এলে এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে কংগ্রেস ১৯৮০ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করলেও এ কথার বাস্তবায়ন করেনি।
১৯৮২ সালে পাঁচ বছরের এ চুক্তি যখন সমাপ্ত হয় তখন বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি ওই বছরেই ভারত সফরে গিয়ে দুই বছরের পানি বণ্টনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তবে ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের পানির নিশ্চয়তার বিষয়টি অনুপস্থিত ছিল। মেয়াদ শেষে ১৯৮৫ সালে পুনরায় তিন বছরের জন্য চুক্তিটি নবায়ন করা হয়। এর মাঝেই ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয় এবং দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্লাবিত হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে এ বন্যার জন্য পুরোপুরি ভারতের ফারাক্কাসহ বিভিন্ন ব্যারাজ নির্মাণকে দায়ী করা হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণের পর ফারাক্কার পানি বণ্টনের বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়র পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কার্যত কোনো সমাধান আসেনি। এর মাঝে ১৯৮৫ সালের চুক্তিও শেষ হয়। নতুন কোনো চুক্তি না হলেও ভারত গঙ্গা থেকে পানি উত্তোলনের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেয়।
১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ভারতেও তখন বামপন্থী নন-কংগ্রেস নতুন সরকার গঠিত হয়। ওই সময়ে আবারো গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং একই বছর ডিসেম্বরে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সে চুক্তি অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত নদীতে ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানি থাকলে দুই দেশ সমান পানি ভাগ করে নেবে। পানির পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক হলে ৩৫ হাজার কিউসেক পাবে বাংলাদেশ। অবশিষ্ট প্রবাহিত হবে ভারতে। আর নদীর পানির প্রবাহ যদি ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি হয় তাহলে ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাবে ভারত। অবশিষ্ট পানি প্রবাহিত হবে বাংলাদেশে।
তবে এ চুক্তি নিয়েও বেশকিছু জটিলতা রয়েছে। গঙ্গা নিয়ে স্বাক্ষরিত মোট পাঁচটি চুক্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গঙ্গায় বাংলাদেশের পানির হিস্যা ক্রমেই কমেছে। এছাড়া উপমহাদেশে অন্যান্য পানি বণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে দেশগুলোয় নদীর মোট প্রবাহকে বিবেচনা করা হয় এবং উজানে নদীর ওপর নির্মিত সব ব্যারাজ, ড্যাম বা বাঁধের তথ্য ভাটির দেশকে দেয়া হয়। এমনকি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সিন্ধু চুক্তিতেও এ বিষয়টি অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে শুধু ফারাক্কা ব্যারাজের পানির তথ্য প্রদান করে। যদিও গঙ্গার উজানে আরো একাধিক ব্যারাজ ও ড্যাম নির্মাণ করেছে ভারত, যা ফারাক্কা পর্যন্ত গঙ্গার স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে।
গঙ্গা চুক্তি নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম। গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে প্রকাশিত বইয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, উপমহাদেশীয় রীতি অনুযায়ী নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সাধারণত সমতা ও সাম্যতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে তার কোনোটিই করা হয়নি। এছাড়া এখানে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টিও উপেক্ষা করা হয়েছে।
পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ক্ষেত্রে ফারাক্কা ব্যারাজের চুক্তি যতটা না জনগণের কথা চিন্তা করে হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে। আমরা যদি ’৯৬-এর চুক্তিও বিবেচনা করি তাহলেও এ চুক্তিতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয়নি। এটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হলেও ’৭৫ কিংবা ’৭৭-এর চুক্তির তুলনায়ও এটি দুর্বল ছিল। এ চুক্তিতে বাংলাদেশের পানির পরিমাণ ২৭ হাজার কিউসেকেও নেমেছে। ফলে আমাদের রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলের নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়, এ অঞ্চলে তীব্র পানি সংকট। এছাড়া ফারাক্কা ছাড়া গঙ্গার উজানে ভারতের আরো যেসব ব্যারাজ ও ড্যাম রয়েছে, সেসব নিয়েও কোনো তথ্য আমাদের দেয়া হয় না।’
এদিকে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সালের গড় প্রবাহ বিবেচনায় বাংলাদেশে যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হতো, চেষ্টা করা হবে সেই পরিমাণ প্রবাহই বজায় রাখার। তবে ২০২৪ সালের প্রবাহের সঙ্গে এ প্রবাহ তুলনা করে দেখা গেছে ওই সময়ের তুলনায় বর্তমানে পানির প্রবাহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমেছে। এছাড়া এ ব্যারাজের প্রভাবে রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ নদী নাব্যতা হারিয়েছে। একদিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে তীব্র পানি সংকটে চাষাবাদ ব্যাহতসহ জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অপরদিকে বর্ষায় নদীর নাব্যতা সংকটে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা হচ্ছে।
৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। চলতি বছরের মাঝামাঝি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে চুক্তি নবায়নের বিষয়ে আলোচনা হলে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এছাড়া বাংলাদেশের সরকার পতনের জেরে ভারত-বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং গঙ্গা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও পানি ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই সামনে অগ্রসর হওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করা উচিত।
গঙ্গা চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ড. আসিফ নজরুল তার বইয়ে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো গঙ্গা বেসিনের দেশ হিসেবে নেপালকেও যুক্ত করে তিন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পানি বণ্টন চুক্তি এবং উজানের সব তথ্য ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা। তবে জাতিসংঘের পানি প্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষর না করায় আন্তর্জাতিক আইনের সুরক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে বাংলাদেশের। ১৯৯৭ সালের ২১ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় গৃহীত হওয়া জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দিলেও অজ্ঞাত কারণে অনুস্বাক্ষর করেনি।
বাংলাদেশ এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করলে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর পানি বণ্টনে সুবিধা হবে বলে মনে করেন যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে কাজ চলছে। এখন আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের গঙ্গা চুক্তি নবায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়েই সেখানে আলোচনা হবে। এছাড়া আমরা চেষ্টা করছি ভারত যাতে বাঁধ সম্পর্কিত তথ্য, যেমন বাঁধে পানির উচ্চতা কেমন, সেটি খুলে দেয়া, এগুলো যাতে আমাদের আগেই জানায়। তবে সব বিষয় সামনে এগিয়ে নিতে ভারতের পক্ষ থেকে আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। পাশাপাশি জাতিসংঘের কনভেনশনেও বাংলাদেশ স্বাক্ষর করলে বিষয়গুলো সমাধান আরো সহজ হবে।’