চিত্রকলার অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ ভিজুয়াল আর্ট। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত বাসেল আব্বাস ও রুয়ানে আবু-রহমে এ দম্পতির দুজনই ভিজুয়াল আর্টিস্ট। এ শিল্পী যুগল সিনেমা নির্মাণ, ভিডিওগ্রাফি করার পাশাপাশি নৃত্যশিল্পী রিমা বারানসি এবং সংগীতশিল্পী মাকমাক্কুক, হায়কাল ও জুলমুদের ফিলিস্তিনি বা আরব গানের মিশ্রণ তৈরিও চিত্রগ্রহণ করে কাটিয়েছেন গত তিন বছর। এ সবকিছুর পেছনে এ শিল্পী যুগল চেষ্টা করেছেন পুরো বছর যুদ্ধবিধ্বস্তে থাকা একটি দেশ ফিলিস্তিনের সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়কে তুলে ধরার। তারা নিজেরাও সেখানে কাজ করে উপলব্ধি করেছেন শিল্পচর্চার নানা বিষয়।
এ সবকিছুই ভিডিও ধারণের কারণ। আবু-রহমে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এআরটি নিউজকে বলেন, ‘আমরা অনেক আধ্যাত্মিক চিন্তার মানুষ নই, তবে ফিলিস্তিনে চিত্রগ্রহণের সময় ঘটে যাওয়া নানা বিষয় আমাদের ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছে।’
হাজার বছরের স্মৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভূমি এ বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দেন নিজেদের ইনস্টলেশনে শিল্পী আব্বাস ও আবু-রহমে। এ বছর এমআইটিতে তাদের কাজগুলো নিয়েই দি আর্টিস নিউ এক্সিবিশন শিরোনামে এমআইটি লিস্ট ভিজুয়াল আর্টস সেন্টারে একটি প্রদর্শনী চলছে। সেখানে ছিল ভিজুয়াল আর্ট হিসেবে শিল্পী আব্বাস ও আবু-রহমের কাজের বেশ ভিন্ন ধারা।
প্রায় ১৫ বছর ধরে এ জুটি তাদের কাজগুলোকে নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরি করেছে, যা তারা নিজেদের শৈল্পিক অনুশীলনকে উৎসর্গ করেছেন। ২০১০ সালে শিল্পীরা ফিলিস্তিনে ছিলেন, সেখান থেকে খুব কাছ থেকে তিউনিসিয়া, মিসর ও অন্যান্য আরব দেশে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তও দেখেছেন। সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় থাকা বিপ্লবের নানা প্রতিবাদী চিত্রকর্ম, নাচ ও গানের ভিডিও নিয়ে বাসেল আব্বাস ও রুয়ানে আবু-রাহমের ‘মে অ্যামনেসিয়া নেভার কিস আস অন দ্য মাউথ’ নামে একটি প্রদর্শনী হয়। পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সহিংসতা, ক্ষতি, স্থানচ্যুতি ও জোরপূর্বক অভিবাসনের অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য বহন করে এ যুগলের করা সে কাজে। ২০১০ সালের শেষের দিকে আব্বাস ও আবু-রহমে ইরাক, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ার বিপ্লবের স্থানগুলোয় প্রতিদিনের মানুষের গান ও নাচের অনলাইন রেকর্ডিং সংগ্রহ করেছেন। কাজটি ফিলিস্তিনের চিত্রশিল্পীকে নৃত্যশিল্পীর সঙ্গে এবং নৃত্যশিল্পীকে একদল সংগীতশিল্পী অর্থাৎ পুরো সংস্কৃতিকে একত্রিত করেছিল। আব্বাস ও আবু-রহমের মতে, এ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সে সময়ের অস্থিতিশীল অবস্থান থাকা সম্প্রদায়গুলোকে একত্রিত করতে সহায়তা করেছিল, যা নিয়ে আমেরিকায় একটি ভিজুয়াল আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনীও হয়েছিল। পরে এ শিরোনামের দ্বিতীয় অংশ হিসেবে ২০২২ সালে আবারো কাজ করেন তারা। যেখানে আছে সর্বমোট ১৭০টি ভিডিও।
যা জুন, ২০২২ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে একটি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল। এ কাজের অনেকগুলো এমআইটিতে প্রদর্শনী হয়েছে। বলা যায় নিঃসন্দেহে এটি এমন একটি কাজ, যা দেখে চলে যাওয়ার পরও শ্রোতাদের মনন-চিন্তায় এর প্রভাব থাকবে।