বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে ‘শিল্প বাজার’ বা আর্ট মার্কেট। আয়োজকদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা—‘নান্দনিক জীবনের জন্য শিল্পের প্রসার, পেশাভিত্তিক শিল্পচ্রচর্চায় শিল্প বাজার।’ শিল্প নিয়ে এ আয়োজনে এবার অংশগ্রহণ করেছে দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও আর্ট স্টুডিওসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান। শিল্পকলায় এ আয়োজন চলবে আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত। ১৫ বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমি শিল্পী ও শিল্প শিক্ষার্থীদের এ আয়োজনের মাধ্যমে তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে। আয়োজকদের মতে, এ প্রদর্শনীর মুখ্য উদ্দেশ্য জনমনে শিল্প নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করা।
শিল্প বাজারে অংশগ্রহণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগ, মৃৎ শিল্প বিভাগ, ছাপচিত্র বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কয়েকটি বিভাগ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেখা গেছে ইউডা বিশ্ববিদ্যালয়কে। এছাড়া আছে কয়েকটি আর্ট স্টুডিও ও আজুনা বুনন অ্যান্ড নকশা ঘর। মেলায় এক বিকালে এ লেখকের সঙ্গে কথা হয়েছিল আজুনা বুনন অ্যান্ড নকশা ঘরের প্রতিষ্ঠাতা রুলিয়া আবেদিন লাকীর। মেলায় তার অভিজ্ঞতা এবং নিজের নকশা ঘরের কাজ নিয়ে জানিয়েছেন এ কারুশিল্পী।
রুলিয়া আবেদিন লাকী বুনন ও নকশা নিয়ে কাজ করছেন ১৯৯৬ সাল থেকে। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। পারিবারিকভাবেই তিনি কাজ শিখেছেন। শিল্প বাজারে অংশগ্রহণ বিষয়ে জানালেন, ‘১৫ বছর ধরেই কারুশিল্পী হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি শিল্পকলা একাডেমির এ আয়োজনে যুক্ত হতে। নিজেদের কাজগুলো নিয়ে দর্শকের সামনে আসতে। তবে সাংসারিক বেশকিছু প্রতিকূলতায় আমি কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। ফিল্ডে নামতে গিয়ে আমি তেমনভাবে কারো সমর্থন পাইনি। তবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় আমি নিজের কাজগুলো গুছিয়ে আনতে পেরেছি। এ বছরই প্রথম আজুয়া বুনন অ্যান্ড নকশা ঘর শিল্পকলার আয়োজনে যুক্ত হতে পেরেছে।’
রুলিয়া চেষ্টা করছেন এদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকজ পণ্যকে টিকিয়ে রাখতে। দেশজ পণ্য-নকশা করাই তার প্রতিষ্ঠানের কাজ। তাদের স্টলে নকশিকাঁথা থেকে শুরু করে ম্যাটসহ নানা দেশীয় পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘যদি কখনো কারো মনে হয় দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো ফিরে পেতে চান, তাহলে তিনি যেন আজুয়া বুননে ঘুরে আসেন।’—আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলেন রুলিয়া। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে সহযোগী আছেন ১৭ ও ৯ জন। সবাই নিজেদের কাজ ও আয়ের টাকায় পরিবার নিয়ে চলছেন। দেশের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে কানাডিয়ান একটি সংস্থা থেকেও কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
শিল্পকলায় এ মুহূর্তে একই সঙ্গে চলছে বেশকিছু প্রদর্শনী ও আয়োজন। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে গিয়ে দেখা যায় শিল্প বাজারের অনেক স্টলই ফাঁকা, বিশেষত শিক্ষার্থীদের স্টলগুলো। তবে ইউডা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো স্টলই খোলা ছিল। সকালের দিকে সব স্টলগুলো চালু থাকলেও বিকাল নাগাদ অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে যায়। বিকালে তাই অনেক দর্শনার্থী সেগুলো দেখতে পান না। যে তিন-চারটি স্টল বিকালে চালু ছিল তার প্রায় সবই কারুশিল্পীদের। অনেকে বললেন, চিত্রকর্ম বিক্রয়ের সুযোগ থাকলে মেলা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের আগ্রহ বাড়ত। তার পরও সন্দেহ নেই শিল্প বাজার সাধারণ দর্শনার্থীদের শিল্প নিয়ে জানাবোঝা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।