কারুশিল্পের অনন্য একটি শাখা ভাস্কর্য। ভাস্কর্য তৈরির মধ্য দিয়ে একজন শিল্পী সমাজ, মানুষ ও প্রকৃতির নানা রূপ খুব সহজেই তুলে ধরতে পারেন সাধারণের কাছে। এ ভাস্কর্য তৈরি হয় নানা উপকরণে। তবে এ শিল্পের শুরুটা প্রাচীন গ্রিসে, যেখানে পাথর ও কাঠ ব্যবহারে ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু হলেও ধীরে ধীরে সিরামিকের পাশাপাশি আধুনিক সময়ে আরো নানা ধরনের ধাতুর ব্যবহার লক্ষণীয়। এবার এমনই আয়োজন চলছে ধানমন্ডিতে অবস্থিত কলা কেন্দ্র আর্ট গ্যালারিতে। নবীন শিল্পী সুমন বর্মণের ভাস্কর্যে প্রকৃতি, মানুষ ও জীবন ভাবনার রূপের ছাপই যেন দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে। উপাদান, কাজের প্রক্রিয়া ও কাঙ্ক্ষিত ফর্ম সবকিছু মিলিয়েই অনদব্য সব কয়টি ভাস্কর্য, যা শিল্পীর বৈশিষ্ট্য আর ভালোবাসার মনঃসংযোগে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। কলাকেন্দ্রে প্রদর্শিত শিল্পী সুমন ভাস্কর্যগুলোর মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছেন কাঠ। কাঠের টুকরো খোদাই করে স্থাপত্য, আসবাবপত্র, ভাস্কর্য তৈরি প্রাচীন ও সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রস্তুত হয়ে থাকা বা নিজের তৈরি কাঠের টুকরো সমতল জ্যামিতিক আকার, গঠন এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য যেমন—গিঁট, ফাটল ইত্যাদি ভাবনা নিয়ে, সমন্বয় করে হাতুড়ি-বাটালি আর শারীরিক সংযোগের হ্রাস প্রক্রিয়ায়, আঘাতে, শব্দে পূর্ণ করেছেন শিল্পী তার প্রতিটি কাজ। জ্যামিতিক আকার, কাঠের টুকরো ভেঙে সমতলকে অসমতল, প্রবহমান, গতিশীল রূপ, নকশা তৈরি করেছেন শিল্পী সুমন বর্মণ। এ নকশা জলের শরীরের মতো। তাই তো এ প্রদর্শনীর নাম জলজ। যেখানে ভাস্কর্যের গড়নগুলো বিশেষ নান্দিক আবরণে তৈরি। স্থির, অন্তর্মুখী, নির্লিপ্ত মনুষ্য শরীর সাদৃশ্য আকৃতিগুলো কখনো দাঁড়ানো, উৎসুক ভঙ্গি, কখনো মেলে-হেলে, আবার ঝুলে থাকা ভাস্কর্যগুলো দেখা যাবে গ্যালারিতে। কলাকেন্দ্রের এ আয়োজন জলের নকশায় ত্রিমাত্রিক গড়নগুলো প্রকৃতি, মানুষ আর তার স্থানিক অস্তিত্ব নিয়ে ভাবনা তৈরি করেছে। এ আয়োজনে কিউরেটর হিসেবে যুক্ত রয়েছেন শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান। কলাকেন্দ্রে জলজ প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে ৭ জুন, চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত।