রংঢ়াং পাখি যেভাবে ডাকে

কয়েক বছর আগেও পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে ছিল রংঢ়াং পাখির বিচরণ। এখন আর নেই এ পাখি।

কয়েক বছর আগেও পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে ছিল রংঢ়াং পাখির বিচরণ। এখন আর নেই এ পাখি। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তেই কাটা পড়েছে কত শত পাহাড়। এতে দেখা দিয়েছে নানা প্রাকৃতিক পরিবর্তন। আগের মতো নেই পাহাড়ে সবার জীবন। পাহাড় থেকে সমতল—এ দূর পথ পাড়ি দিয়ে সেখানকার প্রকৃতির পক্ষেই যেন এবার কলাকেন্দ্রে শিল্পী জয়তু চাকমার আয়োজন। ‘রংঢ়াং পাখি যেভাবে ডাকে’ শিরোনামে একক প্রদর্শনীটি গত ৪ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে কলাকেন্দ্রে। প্রদর্শনী নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্পী জয়তু।

ইলাস্ট্রেশন, ডিজিটাল আর্ট, পেইন্টিং, ভাস্কর্য, ড্রয়িং সব মিলিয়ে প্রায় ৬১টি আর্টওয়ার্ক রয়েছে শিল্পীর একক এ প্রদর্শনীতে। ষাটের দশকে কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কাজে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণে পার্বত্য অঞ্চলের জীবন ব্যবস্থা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে সেসব চিত্রই শিল্পী তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা রাঙ্গামাটিতে। কিন্তু দেশের অন্য প্রান্ত থেকে যেভাবে পার্বত্য অঞ্চলকে আমরা উপভোগ করি প্রকৃত দৃশ্যটি এমন নয়। কাপ্তাই লেক, পাহাড়, ঝরনা—এ সবকিছুই মানুষ ভ্রমণ, উপভোগের দৃষ্টিতে দেখে। তবে এর পেছনে সেখানকার নিজস্ব একটি গল্প আছে। যদি কাপ্তাই লেকের কথাই বলি লেক হওয়ার পর স্থানীয়দের অনেকেই তাদের জমি হারিয়েছে। আবাসস্থল, আবাদি জমি সবই হারিয়েছে প্রায় শত শত পরিবার। যেহেতু পাহাড়ে সবার জীবন তাদের জমির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল তাই এসব উন্নয়নমূলক কাজের পেছনের গল্প কেউ জানে না। সেখানে জুম চাষসহ প্রায় সবকিছুই নিজেদের উৎপাদন করতে হয়। তাই ভূমিহীন সবার জীবন কীভাবে পাল্টে গেছে সেসব কিছুই আমার কাজের মধ্য দিয়ে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।’ 

জয়তু চাকমা মনে করেন, পাহাড়ের মানুষজন প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ও বিশ্বাসী। কিন্তু বহু বছর ধরে যেভাবে সবকিছু পরিচালনা হচ্ছে এতে পাহাড়ে জীবন হয়ে উঠেছে আরো কঠিন। পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণের ফলে পানি সংকট দেখা দিয়েছে তীব্রভাবে। পার্বত্য অঞ্চলে সমসাময়িক এসব গল্পও শিল্পী তার কাজে তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন কেন প্রদর্শনীর নাম রংঢ়াং পাখিকে নিয়ে হলো। শিল্পী জয়তু জানান, তিনি তার বাবা ও দাদার কাছ থেকে এ পাখির নাম অনেক শুনেছেন। তাদের ছোটবেলায় পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে রংঢ়াং পাখির বিচরণ ছিল। তবে তিনি তার ছোটবেলায় আর পাখিটি দেখেননি। গাছপালা কেটে ফেলার ফলে পাখিটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের নানা জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে, যা আমরা জানি না। 

পার্বত্য অঞ্চল ও সেখানকার জনজীবনের  গল্পগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন শিল্পী। পাহাড়ি বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সমতলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তরুণ শিল্পী জয়তুর চেষ্টা তার পড়াশোনার সম্পূর্ণ জ্ঞানই যেন তিনি কাজে লাগাতে পারেন সামনের দিনগুলোয়।

আরও