ইসরায়েলের হামলা

লেবাননের অর্থনীতি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকোচনের আশঙ্কা

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪

বণিত বার্তা ডেস্ক

লেবাননে ক্রমবর্ধমান ইসরায়েলি হামলা যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে হামলার কারণে দেশটির কৃষি থেকে পর্যটন খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় চলতি বছর লেবাননের অর্থনীতি ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। খবর দ্য ন্যাশনাল। 

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ক্যারেন উজিয়েল বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর সংঘর্ষ ও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে পারে লেবানন।’ 

২০০৬ সালের পর সম্প্রতি লেবাননে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এছাড়া ইলেকট্রনিকস ডিভাইসে বিস্ফোরণের মাধ্যমে হতাহতের ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব কিছুর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। যদিও এর আগে এ বছর দেশটির অর্থনীতি টানা সপ্তম বছরের মতো সংকোচনের মুখে পড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল ইআইইউ।

ক্যারেন উজিয়েল বলেন, ‘ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে দফায় দফায় সংঘাত বেড়েছে। ইসরায়েলও তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে লেবাননের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনাও পিছিয়ে গেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে লেবাননের অর্থনীতি ও অবকাঠামো আগেই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে স্বল্পস্থায়ী একটি সামরিক অভিযানও মোকাবেলা করার সক্ষমতা নেই দেশটির।’ 

ক্যারেন উজিয়েল আরো জানান, হামলার কারণে সরবরাহ চেইনে সংকট আরো বাড়তে পারে। লেবানিজ ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের বিনিময় হারেও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবারো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ২৩ সেপ্টেম্বর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র বিমান হামলা চালায়। এতে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত সরাসরি যুদ্ধের রূপ নেয়। সাম্প্রতিক ওই হামলায় লেবাননের শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের হাইফা, তেল আবিব এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে রকেট হামলা করে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহ।

গত মঙ্গলবারও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দ্বিতীয় দিনের মতো দক্ষিণ লেবানন ও পূর্বের বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।

লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৬ সালে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিমান হামলায় অন্তত ৫৫৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৫০ জন শিশু এবং ৪৯ জন নারী রয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৮৩৫ জন আহত হয়েছে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি লেবাননের অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে আরো তীব্র করে তুলছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদরা চলতি বছরের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছেন। 

বৈরুতের বাইব্লোস ব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রধান নাসিব ঘোবরিল বলেন, ‘ইসরায়েল লেবাননের ওপর হামলা শুরু করায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে চলতি বছর লেবাননের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। সংকোচনের মাত্রা নির্ভর করছে যুদ্ধের স্থায়িত্ব ও পরিসরের ওপর।’

ঘোবরিল আরো বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কেনাকাটা শুধু অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে সীমাবদ্ধ থাকবে। ভ্রমণের হার ব্যাপকভাবে কমে যাবে, ফলে পর্যটন খাতে প্রভাব পড়বে, বিনিয়োগ আরো কমে যাবে। আমদানির পরিমাণ ২০২৩ সালের ১ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের চেয়ে কম হবে।’

লেবাননের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপপ্রধান নাসের সাইদি বলেন, ‘স্থল আক্রমণ শুরু হলে জিডিপি, রফতানি, রেমিট্যান্স, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ এবং অভিবাসনের মতো খাতে বিধ্বংসী প্রভাব পড়বে। রেমিট্যান্স লেবাননের জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ এবং আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। নগদ অর্থে আসা রেমিট্যান্স দরিদ্র জনগণেরও আয়ের প্রধান উৎস। যুদ্ধের ফলে এর প্রবাহেও বিঘ্ন ঘটতে পারে।’ 

ব্যাংক অডির প্রধান অর্থনীতিবিদ মারওয়ান বারাকাত বলেন, ‘দেশের জিডিপি পাঁচ বছরে ৫ হাজার কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে। যুদ্ধের কারণে এটি”আরো সংকোচনের সম্মুখীন হবে। যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমে যাবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫