শীর্ষ নয় ব্যাংক এমডির সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর

দুর্বল ব্যাংকের টাকা ফেরতে ব্যর্থতায় তিনদিনের মধ্যে সুদসহ পরিশোধ করা হবে

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অন্তত এক ডজন ব্যাংকে নগদ টাকার তীব্র সংকট চলছে। কিছু ব্যাংকের সংকট এতটাই তীব্র যে ওই ব্যাংকগুলোর ক্যাশ কাউন্টারের কার্যক্রম এক প্রকার সীমিত হয়ে পড়েছে। আমানতকারীরা এসব ব্যাংকে কেবল টাকা তুলতেই যাচ্ছেন। কেউ জমা দিচ্ছেন না। আবার টাকা তুলতে না পেরে বেশির ভাগ গ্রাহকই ব্যাংক থেকে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি উত্তরণে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টাকা ধার দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

নগদ প্রবাহের দিক থেকে ভালো অবস্থানে থাকা নয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে গভর্নর বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার নিশ্চিত করতে হবে। ধার নেয়া কোনো ব্যাংক যথাসময়ে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনদিনের মধ্যে সুদসহ পরিশোধ করে দেবে।’ 

গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর ১১টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আগে থেকেই ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি খারাপ ছিল। পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পর আতঙ্কিত গ্রাহকরা গণহারে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলতে ভিড় করছেন। যদিও এ মুহূর্তে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দেয়ার সামর্থ্য এসব ব্যাংকের নেই। সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে নতুন টাকা ছাপিয়ে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়া হয়েছে। বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কোনো ব্যাংককে টাকা ধার দেবে না। তারল্য উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকগুলো সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ধার দেবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। গভর্নরের নির্দেশনার পরও তারল্য উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে আগ্রহ দেখায়নি।

এ পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল তারল্য উদ্বৃত্ত থাকা নয়টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন গভর্নর। বৈঠকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), সিটি ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী, ঢাকা ব্যাংক ও শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেয়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গভর্নর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্যের জোগান দিতে বলেছেন। প্রতিটি সবল ব্যাংক তিনটি দুর্বল ব্যাংককে টাকা ধার দেয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে। দুর্বল ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনদিনের মধ্যে সুদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ফেরত দেবে বলে গভর্নর নিশ্চিত করেছেন।’

কত দিনের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো টাকা পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। আমাদের ব্যাংকগুলোর পর্ষদে প্রস্তাব পাস করতে হবে। এক্ষেত্রে পাঁচ-সাতদিনও লেগে যেতে পারে। আমরা দ্রুত প্রস্তাব পাস করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর চেষ্টা করব।’

তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি পেতে চুক্তি সই করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিপদে পড়া ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড় করানোর সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। দ্রুত ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া দরকার। আগে যেখানে ২ হাজার কোটি টাকা পেলেই যথেষ্ট ছিল, সেখানে এখন আরো বেশি টাকার প্রয়োজন হবে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

প্রায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘পর্ষদ পুনর্গঠনের পর আমরা এরই মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ আদায় করতে পেরেছি। কিন্তু নগদ প্রবাহ ঠিক না হওয়ায় ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। নগদ টাকা ধার দেয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫