প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে ইউরোপের দেশগুলো কয়লার দিকে ঝুঁকতে পারে। এতে আগামী শীতে এ অঞ্চলের দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার বাড়াতে পারে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি রিসার্চ। খবর হেলেনিক শিপিং নিউজ।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, ব্রিটেন ইতালিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনছে। কোনো কোনো দেশ খুব সীমিত পরিমাণে জ্বালানিটি ব্যবহার করছে। তবে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্থনীতি জার্মানির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগই আসে কয়লা থেকে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে পর্যায়ে চলে যায়। এতে জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়টি কিছুটা সহজ হয়েছিল। কিন্তু এরপর শীতকাল ঘিরে ও সরবরাহ বিঘ্নতায় আবারো গ্যাসের দাম বেড়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি রিসার্চ জানায়, ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এলএনজির সরবরাহ ঘাটতি। এছাড়া নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যের কিছু এলএনজি উৎপাদনকারী কারখানায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলমান থাকায় সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
চলতি বছর এশিয়া অঞ্চলে কয়লার চাহিদা কমেছে। এছাড়া বৈশ্বিক মজুদ বাড়ায় অন্য জ্বালানি পণ্যের তুলনায় কয়লার দাম নিম্নমুখী। অন্যদিকে সরবরাহ সংকটে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের অনেক দেশে এলএনজি সরবরাহ করে। তবে নতুন কারখানা স্থাপনে এখনো অনুমতি দিচ্ছেন না দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ কারণে ভবিষ্যতে মিত্র দেশগুলোর কাছে এলএনজি সরবরাহ কমতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের।
ইউরোপের দেশ জার্মানি এখনো কয়লার প্রধান ব্যবহারকারী। জার্মানির বিদ্যুৎ শিল্প এখনো আমদানীকৃত কয়লার ওপর নির্ভরশীল। দেশটির বার্ষিক আমদানি পৌঁছতে পারে ৩ কোটি ৩০ লাখ টনে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কয়লা (১ কোটি ৮০ লাখ টন) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর জেরে ২০২২ সালের পর দেশটিতে কয়লা আমদানি ২৬ শতাংশ কমে গেছে। একই সময়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনও প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে।
ইউরোপের গ্যাস মজুদাগারগুলোয় এখন মজুদ আছে সক্ষমতার প্রায় ৮০ শতাংশ। অক্টোবর শেষের আগেই এগুলো সম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। তবে ইউরোপে এলএনজির আমদানি কমেছে। গত মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ইউরোপে এলএনজি আমদানির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬৬ কোটি ঘনমিটার, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৯৯৮ কোটি ঘনমিটার এবং ২০২২ সালে ছিল ৯ হাজার ৪১৩ কোটি ঘনমিটার। এ সময় পাইপলাইনে আমদানি হওয়া গ্যাসের দাম এলএনজি থেকে তুলনামূলকভাবে কম ছিল।