কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) মিশন পাঠানোর প্রস্তাবে এখনই সাড়া দিচ্ছে না সরকার। আগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার।’ রাজধানীর বেইলি রোডে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত ও যুক্তরাজ্যসহ ২২টি দেশ ও জাতিসংঘের মিশনপ্রধানদের কাছে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
সহিংসতায় বিটিভিতে ঘটা ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বিটিভিতে হাজার হাজার লোক ঢুকে একটা তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। ভিডিও ক্লিপ দেখলে দেখা যাবে যারা সেখানে ঢুকেছে তার বেশির ভাগই ছাত্র নয়। সেখানে যখন বিজিবির প্রথম একটি দল গিয়েছিল তাদের তারা আক্রমণ করতে গিয়েছিল। তখন দ্বিতীয় একটি দল গিয়েছিল। আমরা যেটা দেখেছি ভিডিওতে, তারা কিন্তু প্রথমদিকে আলাপ-আলোচনা করছে। বিজিবির যে গাড়ি ছিল সেগুলো তারা দখল করে নিয়েছে বা পুড়িয়ে দিয়েছে। বিজিবি তো সেখানে গিয়েছিল বিটিভি যে কেপিআই সেটিকে রক্ষার জন্য। তখন তারা (আন্দোলনকারী) যে ভাষা প্রয়োগ করেছিল, সেটা আসলে খুবই অশ্রাব্য, শোনার মতো না। তখন বিজিবি সেখানে যে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তার অনুমতি নিয়ে ফাঁকা গুলি করে। কিন্তু তার পরও আন্দোলনকারীরা চারদিক থেকে বিজিবির কাছে এগিয়ে আসছিল। এবং তারা বলছিল যে তোমাদের (বিজিবি) ১৫ মিনিট সময় দেয়া হলো তোমাদের পরিবারের কাছে বিদায় নিয়ে নাও, এরপর তোমাদের মৃত্যুবরণ করতে হবে।’
এমন পরিস্থিতির পরও কাউকে গুলি করতে দেয়া হয়নি দাবি করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তখন সেখানে যারা ছিলেন তারা সবাই গুলি করার জন্য প্রস্তুত ছিল কিন্তু বিজিবির যে লিডার ছিলেন তিনি কাউকে গুলি করতে দেননি। তিনি নিজে কয়েকজনের পায়ে গুলি করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। তখন যদি ওই পরিস্থিতি সামাল দেয়া না যেত তাহলে বিটিভি ভবন পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যেত। গুলি ছোড়ার ঘটনা খুবই কম এবং সেগুলো আত্মরক্ষা বা বিটিভির মতো প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার জন্য হয়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মৃত্যুর হিসাবটা সরকারিভাবে ১৫০ এখন। এটি আরো অ্যাডজাস্ট হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। তাদের মধ্যে কে কীভাবে মারা গেছেন সেটি অনুসন্ধান করে জানা যাবে। তবে তাদের মধ্যে ২৫ জন ছাত্র ছিলেন। তাদের সবাই আন্দোলনকারী ছিলেন না, বিভিন্ন রকমের ছাত্র ছিলেন বা ছাত্রলীগেরও কর্মী ছিলেন। একটা বড় অংশ ছিলেন পথচারী বা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিছু বাচ্চা ছিল। এগুলো কার গুলিতে মারা গেছে সেটিও স্পষ্ট নয়। পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটা বাচ্চাকে সরাসরি গুলি করবে, সেটিও তো ভাবাই যায় না। করেও নাই তারা।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান এ সময় বলেন, ‘বিটিভির যে ঘটনা, সেখানে কেপিআই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেটি রক্ষায় কী আইন আছে? আইন কী বলে? আমি মনে করি তারা (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) সে দায়িত্ব পালন করেনি, যাতে ক্যাজুয়ালটি না হয়। তারা ভাংচুর হতে দিয়েছে কিন্তু মানুষ মরতে দিতে চায়নি।’