শিক্ষকদের সমাবেশে বক্তারা

সরকার এ পুলিশের বিচার করতে পারবে না

প্রকাশ: আগস্ট ০২, ২০২৪

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের ব্যানারে সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় বক্তারা বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে হবে। সরকার এ পুলিশের বিচার করতে পারবে না। আপনাদের তদন্তকারী সংস্থার ওপর আমাদের কোনো ভরসা নেই। জাতিসংঘের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার করতে হবে।’

গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নিপীড়নবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পপুলেশনস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াসিমা ও বায়েজিদ ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিউপি) শিক্ষক ইমরুল আজাদ, নর্থ সাউথের শিক্ষক রিয়াসাত খান প্রমুখ।

সমাবেশ থেকে কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও গ্রেফতার শিক্ষার্থীসহ অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। ব্লক রেইডের নামে গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।

সমাবেশ থেকে আজ বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি’ ঘোষণাও করেন তারা। দ্রোহযাত্রা নিয়ে প্রেস ক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন। এতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে আহ্বান জানান শিক্ষকরা।

পরে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। অনেক শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না শুনে সমবেত শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ ফটকের দিকে যেতে থাকেন। পরে তারা খবর পান শিক্ষকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যান।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুতফা তার বক্তব্যে বলেন, ‘এ ক্যাম্পাসে পুলিশ, বিজিবি আমরা চাই না। এটা আমাদের ক্যাম্পাস। আজকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করা হচ্ছে। এ জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সরে আসতে বলব। তা না হলে আপনাদেরই সরে যেতে হবে। আপনারা যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করছেন, এজন্য আপনাদের ক্ষমা চাইতে হবে। সরে যেতে হবে।’

রাষ্ট্র পরিচালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের রক্ত সামনে রেখে আমরা আর বসে থাকতে পারি না। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে হবে। আপনাদের তদন্তকারী সংস্থার ওপর আমাদের কোনো ভরসা নেই। জাতিসংঘের মাধ্যমে এ তদন্ত ও বিচার করতে হবে। প্রতিটি ফোঁটা রক্তের হিসাব নিতে হবে। প্রতিটি গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জাতীয় গণতদন্ত কমিশনকে দেবেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সরকারকে দিতে হবে। ঠিক তেমনি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের।’

এরপর বেলা পৌনে ১টার দিকে শিক্ষকরা রাজু ভাস্কর্য থেকে মৌন মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যান। সেখানে তারা নিহত ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির কাঙ্ক্ষিত সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে আন্দোলনের পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা ও ‘রাষ্ট্রদ্রোহী মহলের ষড়যন্ত্রের’ ক্রীড়নকে পরিণত না হওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নীল দল। ‘দেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে’ বক্তব্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নীল দলের আহ্বায়ক আমজাদ আলী। নীল দলের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানানো হয়৷। সেগুলো হলো আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা, দ্রুত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা, আবাসিক হলগুলোয় বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নীল দলের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় নীল দল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ আন্দোলনের এক পর্যায়ে অপ্রত্যাশিতভাবে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা ও দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে নীল দল।

নীল দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্তরালে নাশকতাকারীরা মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ, এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত করার চক্রান্তকে আমরা নিন্দা জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে নীল দলের নেতা নিজামুল হক ভূঁইয়া, নিসার হোসেন, আবদুস ছামাদ, আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, আবদুল বাছির, আবদুর রহিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য আবুল মনসুর আহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫