ড্রোন তৈরি নিয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল তানভীনের

প্রকাশ: আগস্ট ০২, ২০২৪

মহিউদ্দিন মাহি

ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল মেধাবী জাহিদুজ্জামান তানভীনের। লক্ষ্যে পৌঁছেতে পড়ালেখাটাও করে গেছেন মন দিয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুই বোর্ড পরীক্ষায় পান জিপিএ ৫। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডকশন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও শুরু থেকেই রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন বুয়েট আয়োজিত ‘‌মডেল শিপ প্রোপালশন কম্পিটিশন’ ও ‘‌সকার বট কম্পিটিশন’-এ অংশ নিয়ে হাতে তুলেন পুরস্কার।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছিল তানভীনের পদচারণা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনস্টিটিউশন অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং আয়োজিত ইউএএস এয়ারক্রাফট সিস্টেম প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ওই প্রতিযোগিতার ছয়টি পুরস্কারের মধ্যে তিনটিই জেতেন তিনি ও তার দল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নাসা আয়োজিত ইউরোপিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় বিশ্বে দশম এবং এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন তানভীনরা। 

সবই আজ স্মৃতি। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ১৮ জুলাই সংঘর্ষে উত্তরায় গুলিতে প্রাণ হারান জাহিদুজ্জামান তানভীন। পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন দুপুরে পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে এ তরুণ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। বাসা থেকে বেরিয়েই আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে চলা সংঘর্ষের মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশ তানভীনকে আন্দোলনকারী ভেবে গুলি ছোড়ে। সে গুলি তার গলা ছেদ করে বেরিয়ে যায়। বুকজুড়েও ছিল ছররা গুলির চিহ্ন।

গুলিবিদ্ধ তানভীন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আজমপুরের গলির ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।

তানভীনের মা বিলকিস জামানের দাবি, তানভীন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ড্রোন নিয়েই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। আইসিটি ডিভিশনের অধীনে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট (বিগ) প্রতিযোগিতায় জিতে ১০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন। সে টাকা দিয়ে ড্রোন বানানোর প্রতিষ্ঠান ‘‌অ্যান্টস’ তৈরি করেন বন্ধুদের নিয়ে।

কথা হয় অ্যান্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তানভীনের বন্ধু তাওসীফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তানভীনকে ছাড়া এ প্রতিষ্ঠান হয়তো কখনই দাঁড়াত না। অ্যান্টস বর্তমানে ড্রোনের পাইলটিং ও ম্যাপিং নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি, কৃষি অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসাসহ সরকারেরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি আছে আমাদের।’

আক্ষেপ করে তাওসীফ বলেন, ‘তানভীন ছিল আমাদের কোম্পানির হেড অব অপারেশন। কিন্তু তার সৃজনশীলতা ও কর্মস্পৃহা প্রতিস্থাপন করা আমাদের পক্ষে কখনই সম্ভব হবে না। ও মারা যাওয়ায় এ খাতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। সে বিদেশ থেকেও বিভিন্ন অফার পেয়েছিল। শুধু দেশের জন্য কিছু করবে বলেই সে থেকে গিয়েছিল। ড্রোন নিয়ে ছিল তার বড় পরিকল্পনা।’

তানভীন মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরায় থাকতেন। গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যেসব স্থান সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ছিল, তার একটি ওই এলাকা। বিলকিস জামান বলেন, ‘গুলি করে আমার সোনামানিকের গলা-মাথা সব ঝাঁজরা করে দিয়েছে। ও তো কখনো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। বরং বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ড্রোন সম্পর্কে ধারণা দিত। তাকে তো আর ফিরে পাব না। আমার সন্তানের বিনিময়ে হলেও দেশটা যেন শান্ত হয়।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫