প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছদ্মবেশে জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না।’ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে গতকাল জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দেশবাসীকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জামায়াত ও শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। সবাইকে এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে হবে এবং আমি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
আগের মতোই তার জীবননাশের প্রচেষ্টা বারবার আসতে পারে, সেটা তিনি জানেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু আমি পাত্তা দিই না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েও নেবেন। জনগণের কল্যাণে যা যা করা দরকার আমি সবই করব।’
সাম্প্রতিক সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের আড়ালে জঙ্গিরা তাদের হিংস্রতার দাঁত দেখিয়েছে। আমি প্রত্যেকটি জিনিসের (হত্যাযজ্ঞ) তদন্ত চাই যে এর পেছনে কারা রয়েছে এবং কীভাবে ও কী কী ঘটনা ঘটেছে।’
প্রতিটি বিষয় তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যদি কোনো দেশ চায়, তারা বিশেষজ্ঞও পাঠাতে পারে। আমি বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্পদ ধ্বংস করে দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর সহ্য করা হবে না।’
বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দেশব্যাপী এ তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে শেখ হাসিনা মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয়ার আগে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের (আন্দোলনকারী) সঙ্গে সহনশীল আচরণ করেছে। তারা মিছিল করে যেখানে যেতে চেয়েছে, তাদের সেখানে যেতে দিয়েছে।’ তিনি নিজেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বলেছেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী মিথ্যা অপপ্রচার সমানে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না। আমি তো নিজেই সবকিছু হারিয়েছি এবং গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা ও সরাসরি গুলি করে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তার পরও আমি সাহস নিয়ে কাজ করে গেছি। ভয়ও পাইনি, পিছুও হটিনি। কারণ আমার লক্ষ্য এ দেশের মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন, সে কাজটা আমাকে করতে হবে। আমি বলতাম “টাইম ইজ টু শর্ট”। কেননা যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় ঘাতক আমাকে আঘাত করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ, আমি মানুষের জন্য কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ১৫ আগস্টের শহীদ ও সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়।